জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
মনজিল মোরসেদ বলেন, যারা এক কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়েছেন তাদের নাম, ঠিকানা, তালিকা আদালতে দাখিল করতে এবং অর্থপাচারের ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে এবং কী পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ব্যাংকগুলোতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং ঋণের সুদ মওকুফ করার ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে সেটার ব্যপারে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
এছাড়া রুলও জারি করেছেন আদালত। রুলে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা চলছে সেগুলোর ব্যপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না; এসব অনিয়ম, দুর্নীতি, বন্ধ করার জন্য একটি কমিশন গঠন করে সে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না; বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অর্থপাচার হচ্ছে সেগুলোর ব্যপারে কেন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনজিল মোরসেদ।
এ আইনজীবী আরও বলেন, আদালতের নির্দেশে তালিকা এলেই বোঝা যাবে কারা লোন নিচ্ছেন, কারা লোন নিয়ে পরিশোধ করছেন না, কারা মানিলন্ডারিং করছেন। এগুলোর বিষয়ে শুনানির সময় আমরা পরবর্তী নির্দেশনা চাইবো তালিকা অনুসারে।
তিনি বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে কিছুদিন অগে একটা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে আমেরিকা থেকে। সেখানে কিন্তু বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে কতো হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যেসব দেশে যায় তাদেরও কিন্তু রিপোর্ট আছে। এসব রিপোর্ট ব্যাংকের গভর্নরকে কালেক্ট করে আদালতকে জানাতে হবে। রুল শুনানির সময় কী কী স্টেপ নেওয়া যায় আদালত তখন বলবেন।
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, গত ২০ বছরের মধ্যে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, মূলত সেসব ঘটনার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছি। ...পত্র-পত্রিকায় যা দেখেছি, তাতে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে অর্থপাচার হয়েছে বলে আমরা জানি। আর লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে এক-দুই কোটি টাকার লোন বিভিন্ন লোকে পরিশোধ করছে না, সেটা পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট আসছে।
গত ২৩ জানুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে।
নোটিশটি পাঠানোর পর মনজিল মোরসেদ জানান, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনের অনিয়ম, বিভিন্ন প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকসমূহে ব্যাংক ঋণের ওপর সুদ মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে সরকারি ও প্রাইভেট ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা হতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ হচ্ছে, কিন্তু তা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যদিও উক্ত অর্থ নাগরিকদের গচ্ছিত অর্থ।
নোটিশে উক্ত বিষয়ে তদন্ত ও প্রতিরোধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৯৫৩ সনের ইনকোয়ারি কমিশন অ্যাক্টের অধীনে একটি কমিশন গঠন করার অনুরোধ করা হয় বলে জানান মনজিল মোরসেদ।
এ আইনজীবী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংক এন এ বাংলাদেশের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠন করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
ওই নোটিশের জবাব না পেয়েই মঙ্গলবার রিট করা হয় বলে জানান মনজিল মোরসেদ ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
ইএস/এইচএ/