জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (১১ মার্চ) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিট দায়ের করেন নাটোরের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন পুতুল।
পরে ফারজানা শারমিন বাংলানিউজকে বলেন, গত ৭ মার্চ দৈনিক সমকাল পত্রিকায় উত্তরা গণভবন ঐতিহ্যে কুঠারাঘাত শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে নাটোরের বাসিন্দা হিসেবে রিট আবেদন করি।
তিনি বলেন, আদালত এ বিষয়ে রুল জারি করেছেন। রুলে উত্তরা গণভবনকে ন্যাশনাল হেরিটেজ হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না, সংস্কারের নামে ঐতিহাসিক এ স্থাপনা পরিবর্তন করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, গণভবনের যেকোনো ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন, পরিমার্জন করা থেকে বিরত থাকার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং ওই স্থাপনার মূলনকশা পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ড অপসারণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে গণপূর্ত ও পর্যটন সচিব, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নাটোরের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় বাসভবন নাটোরের উত্তরা গণভবনকে আরও বেশি পর্যটক আকর্ষণীয় করার নামে ভেতর ও বাইরে নতুন স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে গণভবনের ভেতরে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি থ্রিডি সিনেপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্নিষ্ট প্রকল্পটি পাস না হলেও রাজশাহীর এক ব্যক্তিকে আংশিক কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্যসংবলিত সাইনবোর্ড গণভবনের ভেতর ও বাইরে টাঙানো হয়েছে। পর্যটন সুবিধা বাড়ানোর নামে বিখ্যাত রাজা দয়ারাম রায়ের শাসনামল, মহান মুক্তিযুদ্ধ ওজাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক এ স্থাপনায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে কয়েকশ' বছরের ঐতিহ্যের বুকে কুঠারাঘাত করা হবে বলে মন্তব্য করেছে স্থানীয় সুধীমহল। তবে জেলা প্রশাসনের দাবি, কেবল বিবেচনার জন্য প্রস্তাব আকারে এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) অনিন্দ্য মণ্ডল জানান, ভেতর ও বাইরে মিলিয়ে উত্তরা গণভবনের জায়গা ৪৪ দশমিক ৩৯ একর। এর মধ্যে ভেতরে ৪১ দশমিক ৫০ একর ও বাইরে ২ দশমিক ৮৯ একর রয়েছে। গণভবনের সৌন্দর্যবর্ধন ও লাভজনকতা বিবেচনায় নতুন স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাব সংবলিত একটি প্রকল্প তৈরি করে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যেখানে ভেতরে প্রায় ৩৪ কোটি ও বাইরে ৩১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। থ্রিডি সিনেপ্লেক্স, মোটেল, শপিং কমপ্লেক্স, সুইমিংপুল, কালভার্ট, পাথওয়ে, বোটিং এবং পুকুরপাড় বাঁধাই করে দর্শনার্থীদের বিনোদনের যাবতীয় ব্যবস্থার পরিকল্পনা রয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে।
২০১৭ সালে গণপূর্ত বিভাগ থেকে এই দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির কর্তৃত্ব নেয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অধিকতর সংস্কারের প্রস্তাব দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প বিবেচনার জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। এতদিন ধরে সর্ববৃহৎ এ প্রকল্প সম্পর্কে অনেকটা অন্ধকারেই ছিল নাটোরবাসী। তবে সম্প্রতি উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এর ভেতরে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি থ্রিডি সিনেপ্লেক্স নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হওয়ার খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে সচেতন মহলে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহ রিয়াজ বলেন, নতুন প্রজন্মের চাহিদা বিবেচনায় প্রকল্পটি পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন আগের জেলা প্রশাসক। প্রকল্পটি পাস হলে ধাপে ধাপে অর্থ বরাদ্দ আসবে। তবে এটি বাস্তবায়ন হলে ইতিহাস-ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হবে না বলে দাবি করেন তিনি। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৯
ইএস/এমএ