বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ঢাকার চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ মাকসুদা পারভিনের আদালতে আসামিদের ‘এক্সামিন’ এর জন্য দিন ধার্য ছিল, কিন্তু আসামি পক্ষে ড. হুমায়ুন আজাদকে জার্মানির মিউনিখে যে ডাক্তার চিৎকিসা করিয়েছে তাকে আনার জন্য সমনের আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করে পুনরায় ২৪ এপ্রিল আসামিদের ‘এক্সামিন’ করার জন্য দিন ধার্য করেন।
হত্যা মামলায় ৪১ জন সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২১ মার্চ আসামিদের ‘এক্সামিন’ এর জন্য দিন ধার্য করেন।
তবে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ১০জন সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের একই তারিখ ধার্য করেন।
‘হত্যা চেষ্টা’ হিসেবে মামলাটি দায়ের করা হলেও পরবর্তিতে তা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে চার্জশিট দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলা দু’টি একই আদালতে বিচারাধীন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, হত্যার মামলাটির বিচার কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের বিষয়টি কবে নাগাদ শেষ হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
২০০৪ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে বহুমাত্রিক লেখক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
পরে দেশে ও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নেন তিনি। ওই বছরের ৮ আগস্ট যান জার্মানির মিউনিখে। সেখানে ১১ আগস্ট মারা যান এ ভাষাবিজ্ঞানী।
এদিকে ওই ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রমনা থানায় ড. হুমায়ুন আজাদের ছোটভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে একটি হত্যা চেষ্টার মামলা করেন। যা পরে হত্যা মামলায় রূপ নেয়।
পরে ২০০৭ সালে ১৪ নভেম্বর দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক আইনে এ মামলায় পৃথক দু’টি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলায় পাঁচজন ও বিস্ফোরক আইনে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক কাজী আবদুল মালেক। পরে এ মামলায় ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
পরে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে হুমায়ুন আজাদের ভাই ও মামলার বাদী মঞ্জুর কবির মামলার বর্ধিত তদন্তের আবেদন করেন। আদালত ওই বছরের ২০ অক্টোবর মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
বিভিন্ন সময় মামলার তদন্ত করেন রমনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান, সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক কাজী আব্দুল মালেক, মোস্তাফিজুর রহমান ও লুৎফর রহমান।
২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জেএমবির পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু করেন তৎকালীন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. হাবিবুর রহমান।
আসামি মিজানুর রহমান ও আনোয়ারুল আলম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা বলেন, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ বইটি লেখার কারণে ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর এ হামলা চালানো হয়। যার পরিকল্পনা করেন সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই।
মামলার অপর আসামিরা হচ্ছেন- হাফিজ মাহমুদ, সালেহীন ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। এর মধ্যে সাবু ছাড়া বাকি আসামিরা কারাগারে।
আর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ধারায় মিজানুর রহমান, আনোয়ারুল আলম ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবুকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য একটি মামলায় জঙ্গিনেতা শায়ক আব্দুর রহমান, আতাউর রহমান সানি, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, খালেদ সাইফুল্লাহর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হওয়ায় মামলার অভিযোগপত্র থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।
এছাড়া মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীসহ আরও পাঁচজনের নাম।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৯
এমএআর/এসএইচ