ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের ষষ্ঠতলায় বিচারকের খাসকামরা রয়েছে, কিন্তু নেই কোনো এজলাস। বিশেষ জজ আদালত-৪ এর এজলাস যখন ফাঁকা হয় তখন সেখানে বিচারকাজ পরিচালনা করতে হয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারককে।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন ভুক্তভোগী নারী বিচারপ্রার্থীরা। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী ও কর্মকর্তারা জানান, সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বেশিরভাগ মামলাই নারী সংক্রান্ত। এর মধ্যে অনেক মামলাই ঢাকার বাইরের, ফলে দূর-দূরান্ত থেকে ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনদের বিচারের আশায় দিনের পর দিন ঢাকায় আসতে হয়। এজলাস না থাকায় বিচারপ্রার্থীরা বসারও সুযোগ পান না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। অনেক সময় সাক্ষ্য না দিয়েই চলে যান সাক্ষীরা। আবার অনেক মামলা উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়ে আছে।
২০১৩ সাল থেকে তিনজন বিচারক বিচার কাজ পরিচালনা করেছেন। দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক এই আদালতে বিচার করে থাকেন। ট্রাইব্যুনালে প্রথম বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান মো. কে এম শামছুল আলম। তিনি অবসরে গেছেন, পরবর্তী বিচারক হিসেবে আসেন মো. সাইফুল ইসলাম। গত বছরে ১৯ এপ্রিল জামালপুর জেলা দায়রা জজ হিসেবে তিনি বদলি হন। তার সময়ে আলোচিত বেশকিছু মামলার নিষ্পত্তি হয়।
২০১৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সালাহউদ্দিন কাদেরের রায় ফাঁসের ঘটনায় তার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুলসহ কয়েকজনকে সাজার রায়টি ছিলো সবচেয়ে আলোচিত রায়। এরপর গত বছর ২২ এপ্রিল বিচারক হিসেবে আসেন মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
২০১৩ সালে এ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য মামলা আসে ৩টি। ২০১৪ সালে ৩৩, ২০১৫ সালে ১৫২, ২০১৬ সালে ২৩৩, ২০১৭ সালে ৫৬৮, ২০১৮ সালে ৬৭৬, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত মামলা এসেছে ১৮৪টি। মোট মামলা ১৮৪৯টি। মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ৪৭৮টি। এ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা গুলশান থানার, মামলা নম্বর ১১৫(৯)১৩ এবং সবশেষ মামলা গোপলগঞ্জ থানার, মামলা নম্বর ৫(৩)১৮।
এসব তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন আদালতের পেশকার মো. শামীম আল মামুন। তিনি ২০১৩ সাল থেকে ট্রাইব্যুনালে আছেন। সর্বপ্রথম এ ট্রাইব্যুনালে সাজা দেওয়া হয় গত ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই জুয়েল নামে এক যুবককে। সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় জুয়েলকে। সবশেষ রায় দেওয়া হয়েছে গত ৯ জানুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ছবি বিকৃত করার অভিযোগে ২০১৩ সালে সাটুরিয়া থানায় সেই মামলা দায়ের করা হয়েছিলো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে সাত বছর কারাদণ্ড দেন সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। যদিও ৫৭ ধারা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার হচ্ছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
২০১৮ সালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা ৭৮টি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন ট্রাইব্যুনালে।
অনেক সফলতার মাঝেও এ ট্রাইব্যুনালে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। গত ৬ বছরে নিজস্ব কোনো এজলাস পায়নি ট্রাইব্যুনাল। নেই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অধীনে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রযুক্তির ছোঁয়া কমই এখানে। ধীর গতিতেই চলছে বিচার কাজ। কিন্তু কতদিন এভাবে চলবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাম শামীম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অন্য এজলাসে ট্রাইব্যুনালের কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৯
এমএআর/এমজেএফ