ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ভাইয়ের বদলে কারাভোগ: সজলকে অব্যাহতি, ওসিকে শোকজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৯
ভাইয়ের বদলে কারাভোগ: সজলকে অব্যাহতি, ওসিকে শোকজ সজল মিয়াকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীতে বড় ভাইয়ের স্থলে গ্রেফতার হওয়া ডাব বিক্রেতা সজল মিয়াকে (৩৪) দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

একইসঙ্গে আসামি না হয়েও কেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি হিসেবে সজলকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো তার জন্য মহানগরীর শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজকে কারণ দর্শাতে বলেছেন।

বুধবার (১২ জুন) বিকেল ৩টার দিকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের (প্রথম) বিচার মো. মনসুর আলম এ আদেশ দেন।

আদেশ অনুযায়ী, ওসি মাসুদ পারভেজকে সাতদিনের মধ্যে আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে জবাব দিতে হবে।

সজলের বাড়ি মহানগরীর ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকায়। বাবার নাম তোফাজ উদ্দিন। সজলের বড় ভাইয়ের নাম সেলিম ওরফে ফজল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় ২০০৯ সালে ফজলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার পর থেকেই তিনি পলাতক। গত ৩০ এপ্রিল সজলকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এরপর ফজল হিসেবে সজলকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সজলকে যখন আদালতে তোলা হয় তখন তার নাম ফজল বলেই গ্রেফতারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। দু’জন সাক্ষী এফিডেফিট করে দেওয়ায় তাকে সেদিন কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু গত ২৬ মে সজল আসামি নন দাবি করে আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তির জন্য আবেদন করেন। এরপর মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। এইদিন আদালত না বসায় পরদিন (বুধবার) আবারও শুনানি হলো। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর এই দিন অব্যাহতি পেলেন সজল।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালে আসামি ফজলের বয়স ছিল ২৭ বছর। বর্তমানে তার বয়স হবে ৪৫ বছর। কিন্তু সজলের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। এছাড়া আসামি ফজল মামলার রায়ের আগে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন তার শারীরিক গঠন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়।

এখন আবার পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যায়, গ্রেফতার সজলের সঙ্গে সে বর্ণনার উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। পুলিশ ভুল করে তাকে ফজল ভেবে গ্রেফতার করেছে।

এই দিন সজলের ছয় ভাই-বোন আদালতে এফিডেফিট করে জানান, যে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফজল দীর্ঘদিন ধরেই নিখোঁজ রয়েছেন। তারা ফজলের কোনো খোঁজ জানেন না। তিনি বেঁচে আছেন কিনা তারা সেটিও জানেন না। আর ফজল হিসেবে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি আসলে সবার ছোট ভাই সজল। এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সজলকে বুধবার এই দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর জন্য ওসির শাস্তির বিধান রয়েছে।

কিন্তু এখানে দু’জন সাক্ষী ওসিকে এফিডেফিট করে দিয়ে বলেছিলেন, এটাই আসামি। তাই ওসির জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। এখন আদালতের নির্দেশের কাগজ কারাগারে পাঠানো হবে। পরে আসামি যাচাই শেষে কারাগার থেকেই মুক্তি পাবেন সজল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৯
এসএস/এএটি

*** ভাই ফজলের বদলে গ্রেফতার সজল এখন কারাগারের ‘কাঠমিস্ত্রি’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।