ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ঋণখেলাপি নিয়ে ব্যাংকের নীতিমালায় আরো ২ মাস স্থিতাবস্থা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৯
ঋণখেলাপি নিয়ে ব্যাংকের নীতিমালায় আরো ২ মাস স্থিতাবস্থা

ঢাকা: ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা জারি করেছে তার কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থার মেয়াদ আরো দুইমাস বাড়িয়েছেন হাইকোর্ট।

রিটের পক্ষে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২৪ জুন) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়।

এরপর রিটকারীদের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২১ মে ঐ সার্কুলারের উপর ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজার রাখার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান।

২১ মে আদেশের পর মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ মে ঋণ খেলাপিদের নতুন করে একটা সুযোগ দিয়ে ২ শতাংশ ডাউন্ট পেমেন্ট জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে সার্কুলার দেয়। ১৬ মে এটির কথা আদালতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা বললো এ ধরনের সার্কুলার হয়নি। এ কারণে ঋণখেলাপিদের তালিকা দিতে ২৪ জুন পর্যন্ত তাদের সময় দেন। এর মধ্যে ওইদিন বিকেলে তারা এটা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এখন এ সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করেছি।
 
তিনি বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণখেলাপির হাত থেকে মুক্তি পাবে, এ কারণে সিআইবিতে তাদের নাম থাকবে না। তখন নতুন করে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে যাবে। এতে ব্যাংকের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। এ কারণে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম-মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সার্কুলের কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য। আদালত ২৪ জুনপর্যন্ত সার্কুলারের কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন।
  
ওই সার্কুলার জারির পরদিন প্রকাশিত পত্রিকার খবরে বলা হয়, ‘ঋণখেলাপিদের গণসুবিধা দিয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ছোট, মাঝারি বা বড়-সব ঋণখেলাপিই পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবে। আগের অনারোপিত সব সুদ মাফ করে দেওয়া হবে। এর আওতায় খেলাপিরা মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবে। ঋণপরিশোধে সময় মিলবে টানা ১০ বছর। প্রথম এক বছর কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করতে হবে না। তাছাড়া ভালো গ্রাহকদের চেয়েও কম সুদে ঋণ ফেরত সুবিধা পাবে তারা। সুদ গুনতে হবে  মাত্র ৯ শতাংশ হারে।

এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ওই নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার জারি করল।
 
‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিটসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ শীর্ষক এ সার্কুলারের শুরুতে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়ী/শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মিতভাবে পরিশোধিত হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ঋণ বিরূপভাবে শ্রেণীকৃত হয়ে পড়ায় ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় উৎপাদনশীল খাতসহ অন্যান্য খাতে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখতে এবং নিয়মিত আদায়ের লক্ষ্যে কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক ঋণখেলাপিরা সুযোগ পাবে। ছাড় গ্রহণের জন্য আগামী ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১৬ আগস্টের খেলাপিদের আবেদন করতে হবে। এ সুবিধা গ্রহণকারীরা ব্যাংক থেকে আবার নতুন করে ঋণ নিতে পারবে। প্রচলিত নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। নতুন ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল হবে।
 
সুবিধাগ্রহণের পর নিয়মিত অর্থ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি করা যাবে না। ৯টি মাসিক কিস্তির তিনটি এবং ত্রৈমাসিক তিন কিস্তির একটি পরিশোধ না করলেও নিয়মিত থাকা যাবে। তবে মাসিক কিস্তির মধ্যে ছয়টি ও ত্রৈমাসিক কিস্তির দুটি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল করা হবে।
 
স্বাধীনতার পর থেকে যারা ঋণখেলাপি, তাদের এককালীন এক্সিট সুবিধা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তাদের খেলাপি ঋণের হিসাব হবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের এককালীন হিসাবায়ন ভিত্তিতে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যত খেলাপি ঋণ আছে, তার হিসাব করা হবে। কোনো ঋণখেলাপি যদি মনে করে, এককালীন ঋণ পরিশোধ করে খেলাপির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে, তাহলে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সার্কুলারে। এতে বলা হয়েছে, ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ঋণখেলাপিরা ঋণ পরিশোধের জন্য এক বছর পর্যন্ত সময় পাবে। আগের সব সুদ বাবদ পাওনা মওকুফ করা হবে। এককালীন পরিশোধের জন্য সুদহার আরো কম, ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের সমান। তবে এক বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে সুবিধা বাতিল হবে।
 
এই এককালীন এক্সিট সুবিধা ও পুনঃতফসিল সুবিধা কার্যকরের ৯০ দিনের ব্যাংক ও গ্রাহকের মামলা স্থগিত করতে হবে। পরে গ্রাহক কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে সুবিধা বাতিল করে মামলা পুনরায় চালু হবে।

মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবির করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপির তালিকা দাখিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রুল জারি করেন। রুলে আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
 
এই আদেশের পরও ঋণখেলাপির তালিকা দাখিল না করায় গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ১৫ দিনের মধ্যে তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়।  

এ অবস্থায় ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিরুজ্জামান আদালতকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী আইনগতভাবে তাদের এই তালিকা দাখিল করার এখতিয়ার নেই।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

এরপর আদালত আগামী ২৪ জুনের মধ্যে দাখিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।  

ওই রিটের মধ্যে সম্পুরক আবেদনে মঙ্গলবার এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, জুন ২৪ ,২০১৯
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।