ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

অভিযোগ গঠনে ওসি মোয়াজ্জেমের শুনানি ১০ জুলাই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
অভিযোগ গঠনে ওসি মোয়াজ্জেমের শুনানি ১০ জুলাই ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন/ফাইল ছবি

ঢাকা: মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ১০ জুলাই (বুধবার) দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

রোববার (৩০ জুন) দুপুরে এ দিন ধার্য করা হয়। আসামিপক্ষ অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

অপরদিকে আসামির আইনজীবী আদালতে আরও দুটি আবেদন করেন। প্রথমত তিনি এজলাসে পুলিশের উপস্থিতিতে আসামির সঙ্গে আইনজীবীদের প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলার সুযোগ চান, দ্বিতীয়ত ১৮৭২ সালের সাক্ষ্যআইনের ৭৬ ধারা মতে এবং ১৮৯৮ সনের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(৪) ধারা মতে ভিডিও সংবলিত পেনড্রাইভের কপি সরবার করা জন্য। আদালত ভিডিও সংবলিত পেনড্রাইভের আবেদন মঞ্জুর করে এর কপি সরবরাহ করার জন্য নির্দেশ দেন।

২৪ জুন (সোমবার) কারাবিধি অনুযারী ডিভিশনের ব্যবস্থা করতে জেল সুপারকে নির্দেশ দেন একই আদালত।

এর আগে আদালতে আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী ফারুক আহম্মদ ডিভিশন দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।

আবেদনে ফারুক আহম্মদ বলেন, আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি। তিনি বাংলাদেশ সরকারের ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা ও প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। তিনি ডিভিশন পাওয়ার হকদার। তাই আদালতে এ বিষয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে জেল সুপারকে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার  নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ১৭ জুন একই আদালত আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ৩০ জুন মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।  

তারও আগে ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ১৭ জুন তাকে ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

ওইদিনই ফেনী সোনগাজী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম মোয়াজ্জেমকে আদালতে হাজির করে।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ‘অসম্মানজনক’ কথা বলায় ও তার জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
 
বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।

সেই সঙ্গে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ৩০ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত ২৭ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানার পক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই।

একই দিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে একই ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সংক্রন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৭ জুন দিন ধার্য করেন আদালত। ওইদিনই তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

পিবিআই-এর প্রতিবেদনে বাদীসহ ১৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনাগাজী থানার চারজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাতের মা। পরে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাকে গ্রেফতার করা হয়।  

যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর থানার ওসির কক্ষে ফের হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। ‘নিয়ম না মেনে’ জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।
 
গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগ মুহূর্তে বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।  

ওইদিন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯/ আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা
এমএআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।