ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দুধে অ্যান্টিবায়োটিক: চার ল্যাবে পরীক্ষার নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
দুধে অ্যান্টিবায়োটিক: চার ল্যাবে পরীক্ষার নির্দেশ

ঢাকা: বিএসটিআই’র লাইসেন্সকৃত সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক, ফরমালিন, ডিটারজেন্ট, কলিফর্ম, অ্যাসিডিটি, স্টাইফলোকাস্টেস ইত্যাদি ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা, তা চারটি ল্যাবে এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বাজার থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে দুধের নমুনা সংগ্রহ করে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর বি) এবং সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে পরীক্ষা করতে হবে।

রোববার (১৪ জুলাই) বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ওই চারটি ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাজার থেকে দুধের নমুনা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট আছে কিনা তা পরীক্ষার সক্ষমতা অর্জন করতে বিএসটিআই’র ল্যাবরেটরির কি পরিমাণ সময় ও অবকাঠামো প্রয়োজন সে বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

মামলাটির পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) দিনও ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে বিএসটিআই’র পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফরিদুল ইসলাম।

পরে অনীক আর হক বলেন, আট নম্বর বিবাদী হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। কলিফর্ম কাউন্ট, এসইডিটি, ফরমালিন, ডিটারজেন্ট অ্যান্ড অ্যান্টিবায়েটিকসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান পরীক্ষা করবে চারটি প্রতিষ্ঠান। চারটি ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিএসটিআই এসবের নমুনা সংগ্রহ করবে। নমুনা সংগ্রহের পর এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করে আলাদা আলাদা প্রতিবেদন দিতে হবে।

শুনানিতে আদালত বিএসটিআই’র কাছে জানতে চান যে, দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট আছে কিনা, তা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে কিনা? জবাবে বিএসটিআইর আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান বলেন, না। কারণ বিএসটিআই’র সেই সক্ষমতা নেই।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? তাদের উদ্দেশ্য (মেনোফেস্টো) কি? জবাবে বিএসটিআই আইনজীবী বলেন, মানবশরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর হচ্ছে না। হয়তো একারণেই এই পরীক্ষার উদ্যোগ।

এসময় আদালত জানতে চান, পাস্তুরিত দুধ গরম করলে অ্যান্টিবায়োটিক চলে যায় কিনা? জবাবে এ আইনজীবী বলেন, না। উচ্চমাত্রার গরমেও যায় না। এসময় আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পাস্তুরিত করার পরও যদি অ্যান্টিবায়োটি থাকে তাহলে এই দুধতো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আদালত বিএসটিআইএ’র আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আরও বলেন, এসব দুধ কেন এখনও বাজারজাত করা হচ্ছে?

এসময় আইনজীবী বলেন, আইন অনুযায়ী এই দুধের মান পরীক্ষা করানোর কথা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির। কিন্ত আজ পর্যন্ত কোনো কোম্পানি তা পরীক্ষা করাতে আসেনি।

আদালতের প্রশ্নের জবাবে বিএসটিআই আইনজীবী বলেন, দুধ ও দুগ্ধজাতপণ্যের মান পরীক্ষার জন্য গত জানুয়ারিতে ১৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এখন একটি কারিগরি কমিটি করা হবে। এই কমিটি নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করতে সর্বোচ্চ ৬ মাস সময় লাগবে।

গত বছরের ১৬ মে বাণিজ্যিকভাবে পাস্তুরিত দুধ সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়েরিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ’র (আইসিডিডিআর,বি) একটি গবেষণা বাংলানিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ এ রিট করেন।

এই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২১ মে এক আদেশে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসচিব এবং বিএসটিআই’র মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই আদেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআই’র আইনজীবী আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। কিন্তু কোনো শুনানির আগেই সেদিন তিনি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।

চৌদ্দটি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটিশনের (বিএসটিআই) দেওয়া প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন— গণমাধ্যমে সংস্থাটির আইনজীবীর দেওয়া এমন বক্তব্যে ৯ জুলাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। ওইদিন আদালতের আদেশ ছাড়া দুধ নিয়ে কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কিছু খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন। এরপর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও পাস্তুরিত দুধের ১০ নমুনার সবক’টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে বলে ১৩ জুলাই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।  

তার এ প্রতিবেদন আদালতে ‍উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত চারটি ল্যাবে পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।