ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বালিশকাণ্ড: ৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার অনিয়মের তথ্য

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
বালিশকাণ্ড: ৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার অনিয়মের তথ্য

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসন প্রকল্পে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকার দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছে।
 
তদন্তের পর কমিটির এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করার জন্য সোমবার (১৫ জুলাই) অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।


 
কাণ্ডটি আলোচনায় আসার পর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হাইকোর্টে রিট করলে ২০ মে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দু’টি তদন্ত কমিটির কথা উল্লেখ করে বলেন, এরই মধ্যে দু’টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। এ রিপোর্টটা আগে আসুক। তারপর যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে পর্যন্ত স্ট্যান্ডওভার রাখা যেতে পারে।  
 
এরপর বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো.সোহরাওয়ারদীর আদালত স্ট্যান্ডওভার রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ১ জুলাই রিট আবেদনটি কার্যতালিকায় ওঠে। ওইদিনের শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কাজতো চলছে, কমিটির কাজ চলছে। ফেয়ার রিপোর্টের স্বার্থে আমাদের ১৪ জুলাই পর্যন্ত সময় দিন। কারণ ১২ জুলাই প্রতিবেদন দেওয়ার পর সেটা হলফনামা আকারে আদালতে জমা দিতে হবে আমাদের। এ কারণে আরও দুইদিন মিলিয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সময় দিন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পরের দিন ২ জুলাই আদেশের জন্য রাখেন। ২ জুলাই আদালত রুল জারি করেন। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় করা দু’টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল এবং প্রতিবেদন অনুসারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা দুই সপ্তাহের মধ্যে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন।  

এ আদেশ অনুসারেই প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
 
প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করে বলা হয়েছে, দায়ী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্বের গুরুত্ব অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা/প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরবরাহ করা মালামালের প্রকৃত মূল্য ৭৭ কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। কিন্তু তাদের দেওয়া হয়েছে একশ ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। তাই অতিরিক্ত পরিশোধিত ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

১৯ মে রিট করার পর ব্যারিস্টার সুমন জানান, গ্রিন সিটিতে অস্বাভাবিক মূল্য ধরা হয়েছে। এটা কয়েকটা পত্রিকায় এসেছে। তাই আমরা নিয়ে এসেছি। একটা বালিশের দাম ধরা হয়েছে প্রায় ছয় হাজার টাকা। কেটলি নিচ থেকে ওপরে নেওয়ার দাম ধরা হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। এটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। গণপূর্ত বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে। গণপূর্ত বিভাগের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সুতরাং তারা নিজেরা তদন্ত করতে পারেন না। এটা জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি থাকা দরকার। এজন্য রিট করেছি।   

এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্য আনুষঙ্গিক কাজের দরপত্রের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা তদন্তের জন্য দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

১৯ মে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসেবে গণপূর্ত অধিদপ্তর নির্মাণাধীন ৬টি ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দাপ্তরিক প্রাক্কলন প্রণয়নপূর্বক ৬টি প্যাকেজে ই-জিপিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্যাকেজগুলোর প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৩০.০০ কোটি টাকার নিম্নে প্রাক্কলন করায় গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলন প্রণয়ন, অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে আলাদা দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের পেমেন্ট বন্ধ রাখতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এরইমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ’

‘আলোচ্য কাজের বিপরীতে এখনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
ইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।