ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বিদেশ থেকে মশা মারার ওষুধ আনতে কত সময় লাগবে?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৯
বিদেশ থেকে মশা মারার ওষুধ আনতে কত সময় লাগবে? সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: মশা মারতে বিদেশ থেকে ‘যথাযথ ওষুধ আনতে কত সময় লাগবে’ তা বৃহস্পতিবারের (০১ আগস্ট) মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।  
এর আগে ২৫ জুলাই (বৃহস্পতিবরা) মশা মারতে এবার সমন্বিত (কম্বাইন্ড) অভিযান চালানোর কথা আদালতকে জানিয়েছিলেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আইনজীবী।

 

ওইদিন আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছিলেন। আদালতে ঢাকা উত্তর সিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু ও দক্ষিণ সিটির পক্ষে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

‘তখন কয়েকদিন উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন’

শুনানিতে নতুন ওষুধের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু বলেন, গত ২৭ জুলাই কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত অনুসারে পরমাণু শক্তি কমিশনে এ বিষয়ে একটি মিটিং হয়েছে। আরও অধিকতর কার্যকর কীটনাশক কিভাবে দেওয়া যায়।

তখন আদালত বলেন, আরও অধিকতর কার্যকর লাগবে কেন, যেটা আছে সেটা কাজ করছে না?

জবাবে আইনজীবী বলেন, কাজ হচ্ছে। কৃষি গবেষণাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ ওষুধকে কার্যকর বলেছে।

তখন আদালত বলেন, সরকার তো বলছে কার্যকর ওষুধ ছিটানোর কথা। যদি কার্যকর ওষুধই হবে তাহলে সরকার কেন বলছে? এই যে অবস্থার (ডেঙ্গুর প্রকোপ) সৃষ্টি হয়েছে, এটা কী কারণে হয়েছে?

এ সময় আইনজীবী বলেন, কার্যক্রম তো চলছেই। আপনারা রুল জারির পর গতি বেড়েছে। কাজ হচ্ছে, কয়েকদিন সময় লাগবে।

তখন আদালত বলেন, আমার তো মনে হয় না। আমার বাসার এলাকায় ওষুধ ছিটাতে আসেনি। আমি এটা বিশ্বাস করি না। আপনারা এই জিনিসটা সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না, আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে আপনাদের সতর্ক করা হয়েছিল। আপনারা উদ্যোগ নিলেন না কেন?

উত্তরে আইনজীবী বলেন, ওই সময় থেকেই তো আমাদের কার্যক্রম চলছে। কিন্তু এখন প্রকোপ বেড়েছে।

এ সময় আদালত বলেন, ওই সময় থেকে উদ্যোগ নিয়ে থাকলে প্রকোপ বাড়ছে কেন? আপনাদের উচিৎ ছিল ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করার পর সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো। এগুলোর কিছুই হয়নি। হলে হয়তো এ পরিস্থিতি হতো না। আমরা রুল দেওয়ার পর আপনাদের (সিটি করপোরেশনের) ঘুম ভাঙলো। তখন কয়েকদিন উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন। এখন সরকার ধমক দিয়েছে, আপনারা চুপ করে গেছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করে?

শুনানির এক পর্যায়ে তৌফিক ইনাম টিপু বলেন, আমরা তো সরাসরি ওষুধ আনতে পারবো না। চায়না থেকে এ ওষুধ আনা হবে। তার জন্য রেজিস্ট্রেশন লাগবে। ওষুধ আনতে দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।

তখন আদালত বলেন, সবাই জানে অকার্যকর ওষুধ দিচ্ছেন। এখন স্টেটমেন্ট দেন কতদিনের মধ্যে আনতে পারবেন। আজকে দেখলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক ডিএস-এর (উপ সচিব) স্ত্রী ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করে? নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার স্ত্রী মারা যায়, তারা জেগে ঘুমালে আমরা তো তাদের ডেকে তুলতে পারবো না।

পরে তৌফিক ইনাম টিপু সাংবাদিকদের বলেন, গত সপ্তাহে আমরা কোর্টকে বলেছি ডোজ (মশার ওষুধ) বাড়িয়ে দিয়ে অনেক বার ছিটাবো। এরপর আমরা কি কি করেছি আজকে সেটার একটা বিবরণ দিয়েছি। আগে প্রতি ওয়ার্ডে ছিল ১৫ জন । এখন ২০ জন করে স্প্রে ম্যান দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ফগার মেশিন আনা হয়েছে। কার্যক্রমটা ব্যাপকভিত্তিক চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে- এখন যে ওষুধ আছে তার পাশাপাশি আরো কার্যকর ওষুধ আনা হবে। সেটার জন্য প্ল্যান প্রোটেকশনে অ্যাপ্লাই করা হয়েছে। যে কেউ চাইলে তো সরাসরি মেডিসিন আনতে পারে না। কারণ এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।  প্ল্যান প্রোটেকশনের অনুমোদন পেলে দ্রুততম সময়ে আনা হবে।

আদালত বলেছেন, আপনারা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানান -আপনারা যে মেডিসিনগুলো আনতে চাচ্ছেন সেটা কত দ্রত এবং কত সময়ের মধ্যে আনা সম্ভব হবে। সে ব্যাপারে আমরা অথরিটির (সিটি করপোরেশন) সাথে কথা বলে সেটা আগামী বৃহস্পতিবার হলফনামা দিয়ে বলবো কতদিনের মধ্যে এটা আনতে পারবো।

কাজী মাইনুল হাসান বলেন, হলফনামা সিটি করপোরেশনও দিবে। আমরাও দিবো।  

এর আগে আদালতের তলবে ২৫ জুলাই হাজির হয়েছিলেন ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।  

গত ২২ জুলাই তাদের তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এর আগে ১৪ জুলাই এক আদেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের বাহক এডিস মশা নির্মূল ও ধ্বংসের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নিতে ডিএসসিসি ও ডিএসসিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ আদালতকে জানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়।

সে অনুযায়ী গত ২২ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু প্রতিবেদন দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি আদালত। এরপর ২৫ জুলাই এই দুই কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন আদালত।

তার আগে এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর ১৪ জুলাই  রুলসহ আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।

রুলে এডিস মশা নির্মূলে ও ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ এ রকম রোগ ছড়ানো বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না এবং এ ধরনের রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চান হাইকোর্ট।  

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র, দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য সচিব, এলজিআরডি সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৯/আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।