ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ফিটনেস খেলাপি: নবায়নে সময় আর ৪ দিন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
ফিটনেস খেলাপি: নবায়নে সময় আর ৪ দিন

ঢাকা: ঢাকাসহ সারাদেশে লাইসেন্স নিয়ে ফিটনেস নবায়ন না করা প্রায় ৫ লাখ গাড়ির দুই মাসের মধ্যে ফিটনেস নবায়ন করতে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে আর মাত্র চারদিন সময় রয়েছে।

এ সময়ের (৩০ সেপ্টেম্বর) মধ্যে ফিটনেসের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া গাড়ির ফিটনেস নবায়ন তথা হালনাগাদ করতে হবে।

গত ২৩ জুলাই এক আদেশে ঢাকাসহ সারাদেশে লাইসেন্স নিয়ে ফিটনেস নবায়ন না করা গাড়িগুলো দু’মাসের মধ্যে ফিটনেস নবায়ন করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

পহেলা আগস্ট (বৃহস্পতিবার) থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের (সোমবার) মধ্যে এটি সম্পন্ন করতে হবে। আর এ বিষয়ে পত্রিকায় ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিতে বিআরটিএকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) দিন ধার্য রেখেছেন।

এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রাব্বানী জানান, আদালতের নির্দেশ অনুসারে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে এ নবায়ন চলছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের পর বলা যাবে কি পরিমাণ গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট হালনাগাদ করা হয়েছে।

সবশেষ বুধবারও (২৫ সেপ্টেম্বর) পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিআরটিএ।  ‘হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক ফিটনেস খেলাপি অর্থাৎ ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযানের ফিটনেস সার্টিফিকেট হালনাগাদ করা সংক্রান্ত বিআরটিএর বিজ্ঞপ্তি’ শীর্ষক ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 

‘মোটরযানের সম্মানিত মালিকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে,বিআরটিএ’র কম্পিউটার সিস্টেম (বিআরটিএ-আইএস) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে সারাদেশে ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন ধরনের মোটরযানের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৪৯৮; যা ইতোপূর্বে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের সুয়োমোটো রুল নম্বর ০৪/২০১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযানের ফিটনেস হালনাগাদকরণের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। উক্ত সময়ের মধ্যে ফিটনেস খেলাপি মোটরযানের ফিটনেস সার্টিফিকেট হালনাগাদকরণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। ’

ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন  ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাফিউল ইসলাম।

পরে একেএম আমিনউদ্দিন জানান, এ সময়ের মধ্যে ফিটনেস নবায়ন না করলে আদালত এসব গাড়ির বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ দেবেন।

আদালতে দাখিল করা বিআরটিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকাসহ সারাদেশে লাইসেন্স নিয়ে ফিটনেস নবায়ন না করা গাড়ির সংখ্যা ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২০টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২ লাখ ৬১ হাজার ১১৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৮৮, রাজশাহী বিভাগে ২৬ হাজার ২৪০, রংপুর বিভাগে ৬ হাজার ৫৬৮, খুলনা বিভাগে ১৫ হাজার ৬৬৮, সিলেট বিভাগে ৪৪ হাজার ৮০৫ এবং বরিশাল বিভাগে ৫ হাজার ৩৩৮টি গাড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন রয়েছে।

তখন বিআরটিএর আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে আদালত বলেন, আপনাদের নাকের ডগায় এত গাড়ি ফিনটেসবিহীনভাবে কীভাবে চলছে। আপনারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না?

জবাবে আইনজীবী বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বিআরটিএ ৩৯ হাজার ৮৩৭টি মামলা করেছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লাখ ২৩ হাজার ৩৯২ টাকা। ডাম্পিং করা হয়েছে ২১৪টি গাড়ি এবং ৭২৮ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও বিআরটিএ মিরপুরে একটি ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) মিরপুরে স্থাপন করেছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলায় করা হবে।  

আদালত বলেন, বিদেশে গাড়িগুলো কত সুন্দর। কোনো দাগ নেই। আর আমাদের গাড়িগুলোর লুকিং গ্লাস নেই। হেডলাইট নেই। দাগ, রং নেই।

জবাবে আইনজীবী বলেন, প্রাইভেট গাড়িগুলো ঠিক আছে। কিন্তু পাবলিক গাড়িগুলো দুর্ঘটনায় পড়ার পর আর ঠিক করে না।

এরপর আদালত বলেন, আমরা দুই মাস সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে আপনার পত্রিকায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেবেন এসব গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করার জন্য। এরপর ১৫ অক্টোবরের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবেন। ওইদিন পরবর্তী শুনানি হবে।

 

গত ২৪ জুন আদালত ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেসবিহীন তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। সে অনুসারে বিআরটিএ হাইকোর্টে প্রতিবেদন।  

এর আগে গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি সংক্রান্ত দৈনিক ডেইলি স্টার গত ২৩ মার্চ একটি প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরের আনেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব। এরপর ওইদিন আদালত রুলসহ আদেশ দেন।

‘রুলে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর বিষয়ে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, পাশাপাশি সংবিধানের ৩২ ধারার আলোকে জীবন বাঁচার অধিকার বাস্তবায়নে কেন মোটর ভেহিক্যাল আইন ১৯৮৩ এর বিধানগুলো সঠিকভাবে পালনের জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন।  

রুলের বিবাদীরা হচ্ছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, চেয়ারম্যান বিআরটিএ, ঢাকার  ডিসি ট্রাফিক  (উত্তর ও দক্ষিণ), বিআরটিএ ডাইরেক্টর (রোড নিরাপত্তা) ও দুদক চেয়ারম্যান ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।