বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এক রিটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন।
রায়ে এ চার গ্রামে অব্যাহতভাবে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত পানি আইন, ২০১৩-এ ধারা (১৭)-এর অধীনে চরকানাই, হুলাইন, পাচুরিয়া এবং হাবিলাসদ্বীপ গ্রামগুলোকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিবাদী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসককে আদালতে আটিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক করা দূষণের পরিমাণ যাচাই করে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়াও ভবিষ্যতে এই চারটি গ্রামে বিকল্প পানির ব্যবস্থা না করে ভূ-গর্ভস্থপানির উপর নির্ভর করে কোনো লাল বা কমলা- খ শ্রেণির শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হতে পারবে না। পটিয়া উপজেলায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া এবং কার্যকরী বর্জ্যশোধনাগার প্ল্যান ছাড়া কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান যেন পরিচালিত হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে মেমো প্রস্তুত করে আদালতে দাখিলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী ফিদা এম কামাল, আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান এবং সাঈদ আহমেদ কবীর।
আদালতের রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাঈদ আহমেদ কবীর।
তিনি জানান, আটটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার, হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই, হুলাইন, পাচুরিয়া এবং হাবিলাসদ্বীপ গ্রামে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্থাপতি ৩৫০টি টিউবওয়েল বিকল হয়ে পড়লে গ্রামগুলোর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়ে। যে আটটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকর্তৃক ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে গ্রামগুলো এ পানি শূন্যতা তাদের মধ্যে ছয়টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই এবং বেশিরভাগই বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান ছাড়া পরিচালিত হচ্ছিল। তাদের সৃষ্ট দূষণে পার্শ্ববর্তী বোয়লখালী, গরুলতা এবং আলমডাঙা খালের পানি দূষিত হয়ে পড়লে গ্রামবাসী সুপেয় পানির পাশাপাশি চাষাবাদের পানির ও তীব্র সংকটে পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তর তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলেও প্রতিষ্ঠানগুলো আইন অমান্য করে এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরিমানাও প্রদান না করে কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
বেলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, পানি আইনের অধীনে দেশে কোনো এলাকাকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা দাবি জানিয়ে এটিই প্রথম আইনি কার্যক্রম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৯
ইএস/জেডএস