বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৮ জানুয়ারি তাদের তলব করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক বলেন, জেলা সদরের সরকারি হাসাপতালগুলোতে সিসিইউ-আইসিইউ আছে কিনা, থাকলে কি অবস্থা, না থাকলে সেগুলোর ব্যপারে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এই সমস্ত ব্যাপারগুলো জানতে চেয়েছিলেন আদালত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আজকে নতুন কোনো প্রতিবেদন দেয়নি ।
আইনজীবী বশির আহমেদ বলেন, আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালন না করায় আগামী ৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও একজন ডিরেক্টরকে তলব করেছেন।
এর আগে ২৮ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের পরিচালক ডা. মো. আমিনুল হাসানের দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে ৩০ বেডের আইসিইউ এবং সিসিইউ স্থাপনের মতো স্পেস (জায়গা) আছে কিনা এবং প্রয়োজনীয় জনবল আছে কিনা ইত্যাদি তথ্য নেওয়া হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, স্পেস এবং জনবলের সংকট থাকাতে প্রয়োজনীয় স্পেস তৈরি এবং জনবল পদায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে নিড এবং প্রায়োরিটি অ্যাসেসমেন্ট পূর্বক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ ও ৩০টি সিসিইউ বেড, নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে ২টি সিসিইউ বেড, কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১৫টি সিসিইউ বেড, পাবনা জেলা সদর হাসপাতালে ৪টি আইসিইউ বেড ও ৮টি সিসিইউ বেড এবং ভোলা সদর হাসপাতালে ৪টি সিসিইউ বেড চালু রয়েছে।
এছাড়া কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, জামালপুর, রাঙ্গামাটি, নেত্রকোনা, নওগাঁ, মাগুরা, চাঁদপুর ও হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে আইসিইউ ও সিসিইউ বেড স্থাপনে কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহের জন্য এখন পর্যন্ত আলাদাভাবে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ভবন চালু না হওয়ায় তাদের হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালেই হয়ে থাকে, যেগুলোতে ৩০ বেডের আইসিইউ ও সিসিইউ ইউনিট স্থাপনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
এসব জেলা সদর হাসপাতাল ছাড়াও বাকি সব জেলা সদর হাসপাতালে ৩০ বেডের আইসিইউ এবং সিসিইউ ইউনিট স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে।
এদিকে বুধবার দেওয়া এক পৃষ্ঠার তথ্যে বলা হয়, দেশের সব জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ঠিক এই সময়ে (প্রয়োজনীয় স্পেস, জনবল ও যন্ত্রবলের সংকট থাকতে) আইসিইউ চালু করা সম্ভব না হলেও ভবিষ্যতে হাসপাতাল ভবনের সম্প্রসারণ সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে আইসিইউ চালু করা সম্ভব হবে। এজন্য মধ্য থেকে দীর্ঘ-মেয়াদী সময়ের প্রয়োজন হবে।
হিউম্যান রাইটস ল’ইয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিং এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের পক্ষে কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম গত বছরের জুলাই মাসে এ রিট দায়ের করেন।
রিটের পর ২৪ জুলাই হাইকোর্ট বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতাল ল্যাবরেটরি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মূল্য তালিকা এবং ফি পাবলিক প্লেসে ১৫ দিনের মধ্যে আইন অনুসারে প্রদর্শনের নির্দেশ দেন।
ওইদিন আদেশে বলা হয়, দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ অনুসারে নীতিমালা তৈরি এবং বাস্তবায়নের জন্য ৬০ দিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে।
এছাড়া রুলে চলমান হাসপাতাল এবং ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স অনুমোদন, তাদের সেবার বিষয় তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণের জন্যদ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ অনুসারে নীতিমালা তৈরির কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সব জেলা সদরের হাসপাতালে আইসিউ/সিসিইউ স্থাপনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এ আদেশের পর হাইকোর্টে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, আদালতের আদেশ অনুযায়ী ওই বছরের ৯ আগস্টের মধ্যে মূল্য তালিকা টাঙানো নিশ্চিতকরণ এবং আদেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া গত ২৪ জানুয়ারি ‘দ্য মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২’ অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পরে আদালত দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে কতগুলো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এবং করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) আছে, তার একটি তালিকা চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে আদালত একটি আইসিইউ ও সিসিইউ ইউনিট স্থাপনে কত টাকা খরচ হয়, কি পরিমাণ লোকবল ও বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন, সে বিষয়েও প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
এ আদেশ অনুসারে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় মন্ত্রণালয়। একটি আইসিইউ ও সিসিইউ ইউনিট স্থাপনে কত টাকা খরচ হয়, কি পরিমাণ লোকবল ও বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন, সেসব বিষয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের পরিচালক ডা. মো. আমিনুল হাসানের দেওয়া এক প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড স্থাপনের জন্য খরচ গড়ে প্রায় ৫৩ লাখ টাকা এবং প্রতিটি করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বেড স্থাপনের জন্য খরচ গড়ে প্রায় ২৩ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে।
একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে কতগুলো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এবং করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) এর একটি তালিকাও দাখিল করা হয়েছে। তবে এ তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানানো হয়।
এরপর আদালত আইসিইউ ও সিসিইউ এর হালনাগাদ তথ্য চেয়ে আদেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
ইএস/এমএ