বাংলাদেশ বিমানের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী আহসানের জামিন শুনানিকালে আদালতে বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে গ্রেফতার বিমানের দুই সাবেক কর্মকর্তার দু’দফা জামিন শুনানি হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ বিমানের ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন।
ওইদিন দুপুরেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী আহসান ও সাবেক ব্যবস্থাপক ইফতেখার হোসেন চৌধুরী গ্রেফতার হন। ওইদিন এ দুজনকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইলিয়াস মিয়া কারাগারে পাঠান।
সেই আদালতেই আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু এই মামলায় আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার না থাকায় বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তাই বুধবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে ফের জামিন আবেদন করেন এ দুইজন। এ বিষয়ে বুধবার দু’দফায় শুনানি হয়। দুপুর দেড়টার দিকে মোহাম্মদ আলী আহসানের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান জামিন শুনানি শুরু করেন।
প্রথম দফায় শুনানি করেন সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের দাওয়াত করে নিলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকার পরও আমাদের সেখান থেকে গ্রেফতার করলো। এটা দুদকের নতুন ট্রেন্ড। আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে তারা এই কাজ করেছে। এর আগে এমন ট্রেন্ড ছিল না। ’
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ করা হয়েছে আসামিরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো শাখায় দায়িত্ব পালনকালে পারস্পরিক যোগসাজশে অবৈধ সুবিধা নিয়ে কার্গো ও মেইল হ্যান্ডলিং চার্জের ১১৮ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৮ টাকা আদায় না করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেছেন। কিন্তু আলী আহসান কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। এই দুজনের নামও এজাহারে নেই। এমনকি যোগসাজশও নেই। তারপরও অতিরিক্ত হিসেবে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের অন্যতম আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, বিমান কর্তৃপক্ষ অডিট করে অনিয়ম পেয়েছেন। ওজনের রেটেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। আসামিরা ভাড়ার রেটে কারচুপি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তখন বিচারক বলেন, এজাহারের সঙ্গে সম্পর্কিত ডকুমেন্টস ও আইন দেখান। প্রায় ১১৮ কোটি টাকার মামলা অথচ এজাহারের সঙ্গে সমর্থিত কোনো কাগজপত্র নেই। এরপর দলিল উপস্থাপনের জন্য সময় দিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান বিচারক।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর বেলা তিনটায় এই মামলায় জামিন আবেদের ওপর ফের শুনানি হয়। বিচারক তখন বিমানে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিকভাবে মালামাল আনা-নেওয়া, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ বিমানের পারষ্পরিক সম্পর্ক ও কার্গো হ্যান্ডেলিং নিয়ে বিভিন্ন আইনের ব্যাখ্যা চান।
দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর ও আদালতে উপস্থিত দুদক কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বিষয়টি পরিষ্কার ব্যাখ্যা করতে পারেননি। তাই বিচারক জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার ফের তারিখ রাখেন।
এই মামলার আসামিরা হলেন-বিমান বাংলা এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (কার্গো) মো. আরিফউল্লাহ, সৌদি আরবের কান্ট্রি ম্যানেজার মো. শহীদুল ইসলাম, সৌদি আরবের রিয়াদের রিজিওনাল ম্যানেজার আমিনুল হক ভূঁইয়া, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মো. লুতফে জামাল, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মোশাররফ হোসেন তালুকদার, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) রাজীব হাসান, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) নাসির উদ্দিন তালুকদার, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) অনুপ কুমার বড়ুয়া, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব/বাণিজ্যিক) কেএন আলম, সহকারী ব্যবস্থাপক (আমদানি শাখা) ফজলুল হক, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) সৈয়দ আহমেদ পাটওয়ারী, মনির আহমেদ মজুমদার, একেএম মঞ্জুরুল হক ও মো. শাহজাহান।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো শাখায় দায়িত্ব পালনকালে পারস্পরিক যোগসাজশে অবৈধ সুবিধা নিয়ে কার্গো ও মেইল হ্যান্ডলিং চার্জের ১১৮ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৮ টাকা আদায় না করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এ কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪১৮/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
কেআই/এমএ