ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

শর্তসাপেক্ষে পরিচিতরা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
শর্তসাপেক্ষে পরিচিতরা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন

ঢাকা: বিশেষ পরিস্থিতিতে নিকট আত্মীয়ের বাইরে পরিচিত কিংবা সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিরা ইমোশনাল কারণে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শর্তসাপেক্ষে দান করতে পারবেন। এমন বিধান রেখে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ছয় মাসের মধ্যে সংশোধন করতে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে জারি করা রুলে চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও মো. শাহীনুজ্জামান শাহীন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।

পরে সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, আদালত কতগুলো গাইডলাইন দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। আত্মীয়ের বাইরে বিশেষ পরিস্থিতে অতি পরিচিতরা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ডোনেট করতে পারবেন। এ ডোনেটের সময় কোনো প্রকার বিনিময় হবে না। ডোনেশনটা ইমোশনাল কি-না সেটাও দেখতে হবে। পরিচয়ের সপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে হবে। এক কথায় আদালতের নির্দেশিত গাইডলাইনের শর্তে পরিচিতরা ডোনেট করতে পারবেন। একইসঙ্গে আদালত ছয়মাসের মধ্যে বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে বলেছেন।

রাশনা ইমাম বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে পরিচিত এবং সম্পর্ক আছে এমন ব্যাক্তিরাও চাইলে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। অর্থাৎ নিকট আত্মীয় ছাড়া কেউ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবে না, আইনের এমন বিধান আর কার্যকর থাকছে না। একইসঙ্গে আদালত এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালাও সংশোধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আইন অনুসারে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনা-বেচা নিষিদ্ধ। তাই আদালত কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। গাইডলাইন দিয়েছেন। দাতা নিজ ইচ্ছায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করছেন কি-না, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনা-বেচা হচ্ছে কি-না, দাতা মানসিকভাবে সুস্থ, মাদকাশক্ত কি-না, তাও নির্ণয় করতে হবে।

এর আগে ২১ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। রুল শুনানিতে আদালত বিশেষজ্ঞ মতামতও নিয়েছেন।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

রুলে ওই আইনের অধীনে ১৮ বছরেও বিধি প্রণয়ন না করায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন ফাতেমা জোহরা নামের এক ব্যক্তি।

আইনজীবীরা জানান, ফাতেমা জোহরা ২০১৫ সালে তার মেয়ে ফাহমিদাকে একটি কিডনি দান করেন। এরপরও মেয়ের কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। বর্তমানে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। যা ব্যয়বহুল। কিন্তু আইনগত বাধার কারণে মেয়েকে দাতার কাছ থেকে কিডনি দিতে পারছেন না তিনি। এ অবস্থায় তিনি রিট আবেদন করেন।
 
ওই সময় ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন-১৯৯৯-এর ২গ ধারায় দাতার সংজ্ঞা দেওয়া আছে। সংজ্ঞায় দাতা হিসেবে নিকটাত্মীয়দের কথা বলা আছে। আর নিকটাত্মীয় বলতে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা, চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও স্বামী-স্ত্রীকে বলা হয়েছে। কিন্তু ভারতে এ বিষয়ক আইনে নিকটাত্মীয়ের সংজ্ঞায় ওই ক’জন ছাড়াও নানা-নানি, দাদা-দাদি, খালাতো, মামাতো, চাচাতো ভাইবোনের কথা বলা আছে। এছাড়া ভারতের আইনে বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিকটাত্মীয় ছাড়াও অন্যরা দাতা হতে পারবেন। এক্ষেত্রে ওই আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে কারা বিশেষ পরিস্থিতিতে দাতা হতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের আইনে দাতাকে ১৮ বছর থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত বয়সের ব্যক্তি হতে হবে। মেডিক্যাল বোর্ডের ছাড়পত্র নিতে হবে। আইনের এ বাধ্যবাধকতার কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
ইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।