মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে এসএম শাহজাহান জানান, এই আদেশের ফলে গৃহকর্ত্রী নদী আর কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না।
২০১৪ সালের ১৮ জুলাই শিশু গৃহকর্মী আদুরীকে নির্যাতন করে মৃত ভেবে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার দায়ে গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৩ নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। তবে তার মাকে খালাস দেন। এছাড়া রায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে নদীকে। এ টাকা নির্যাতিত আদুরীকে দিতে হবে।
পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন নওরীন জাহান নদী। এই আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ৩১ জুলাই তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। তবে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারা ও ডিওএইচএস তেলের ডিপোর মাঝামাঝি রেললাইন সংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় কঙ্কালসার ও মৃতপ্রায় গৃহকর্মী আদুরীকে। উদ্ধারের সময় তার শরীরে ছিলো অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন।
পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ২৯/১, সুলতানা প্যালেসের দ্বিতীয় তলায় সাইফুল ইসলাম মাসুদের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো শিশু আদুরী।
দীর্ঘদিন মারধর, গরম খুন্তি ও ইস্ত্রির ছ্যাঁকা, ব্লেড দিয়ে শরীর পোঁচানো, মাথায় কোপ, মুখে আগুনের ছ্যাঁকা, খেতে না দেওয়াসহ নানা নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে মৃত ভেবে ওই ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলেন মাসুদের স্ত্রী গৃহকর্ত্রী নদী ও তার পরিবারের লোকজন।
প্রায় দেড় মাস আদুরীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। যখন তাকে রিলিজ দেওয়া হয়, তখনও সে ভালোভাবে কথা বলতে পারতো না। শরীর ছিলো প্রচণ্ড দুর্বল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ওই বছরের ৭ নভেম্বর আদুরী চলে যায় পটুয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে।
নির্যাতনের ঘটনায় তিনদিন পর ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় নওরীন জাহান নদী, তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ, মাসুদের দুলাভাই চুন্নু মীর ও তাদের আত্মীয় রনিকে আসামি করে মামলা করেন আদুরীর মামা নজরুল চৌধুরী।
তবে পুলিশি তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিট থেকে মাসুদ, চুন্নু মীর ও রনিকে বাদ দেওয়া হয়। তদন্তে নদীর মা ইসরাত জাহানের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় নতুন করে তাকে আসামি করা হয়।
মামলার দিনই ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় নদীকে। গ্রেফতারের পর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদুরীকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করে ওই বছরের ১ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
আদুরীও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়। সে বলেছিল, গৃহকর্ত্রী নদী তাকে দিনে একবেলা খেতে দিতেন, তাও মুড়ি। মাঝে মধ্যে ভাত দিতেন, তাও শুধু লবণ কিংবা মরিচ দিয়ে। থাকতে দিতেন ব্যালকনিতে। আর নির্যাতন চলতো অহরহ।
২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী ও তার মা ইসরাত জাহানকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের এসআই কুইন আক্তার।
চার্জশিটে বলা হয়, আগেরদিন ধারালো ছুরি দিয়ে গৃহকর্মী আদুরীর শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে, ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে গৃহকর্ত্রী নদী মারাত্মক জখম করে শিশুটিকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসেন।
২০১৪ সালের ০৬ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
** নদীর যাবজ্জীবনে খুশি আদুরী
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
ইএস/জেডএস