রোববার (২২ ডিসেম্বর) এই মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তাই চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে এদিন সালমান শাহ’র কয়েকজন ভক্ত এসেছিলেন।
মানববন্ধনে আসা মামুনুল ইসলাম নামে সালমান শাহ’র এক ভক্ত বলেন, চাঞ্চল্যকর সগীরা মোর্শেদ হত্যা মামলার রহস্য ৩০ বছর পর পিবিআই এর মাধ্যমে বের হয়েছে। আশা করছি দুই যুগ আগে সালমান শাহের মৃত্যুর এই রহস্য বেরিয়ে আসবে।
বিথি মনি ভূঁইয়া নামে আরেক ভক্ত বলেন, যতোদিন বেঁচে থাকবো আমরা প্রিয় নায়কের হত্যার বিচার চেয়েই যাবো।
মাসুক রানা নকীব নামে আরেক ভক্ত বলেন, আজ (রোববার) প্রতিবেদন দাখিল হচ্ছে না বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিছুটা সময় লাগুক তারপরও আমরা আশা করছি পিবিআই ঘটনার সঠিক রহস্য উদঘাটন করতে পারবে।
সিএমএম কোর্ট পুলিশের নন-জিআর শাখা থেকে জানা গেছে, পিবিআই এর প্রতিবেদন রোববারও জমা হয়নি। তাই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ আগামী ২ ফেব্রুয়ারি নতুন করে দিন ধার্য করেছেন।
বাদী হিসেবে এখন সালমান শাহের মামলার দেখভাল করছেন তার মা নীলা চৌধুরী। দেশের বাইরে থাকায় তিনি আজ আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ জানিয়েছেন, দীর্ঘ ২৩ বছরেও সালমান শাহের মৃত্যুর রহস্য আমরা উন্মোচন করতে পারিনি, এটা দুঃখজনক। যেহেতু পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে, আশা করছি এখান থেকে ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হবে এবং বিলম্বে হলেও প্রকৃত দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হবে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ রহস্যজনকভাবে মারা যান। সে সময় এই বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।
এই মামলায় ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন।
পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই মামলার বাদী সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।
মামলাটি এরপর তদন্ত করে র্যাব। তবে র্যাবকে তদন্ত দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করে র্যাবকে মামলাটি আর না তদন্ত করার আদেশ দেন।
তখন থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে আছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
কেআই/জেডএস