জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (২০ জানুয়ারি) রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে জনসাধারণের স্বাস্থ্য রক্ষায় সারাদেশে অনুমোদনহীন ও মানহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিএমঅ্যান্ডডিসির সভাপতি, ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট ছয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. জে আর খাঁন (রবিন)। তিনি আদেশের বিষযটি নিশ্চিত করেছেন।
২০১৬ সালের ২০ জুলাই বিএমঅ্যান্ডডিসি রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব নিবন্ধিত চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক এবং সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত নয় এমন কোনো নাম পদবি শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি বিএমঅ্যান্ডডিসি থেকে নিবন্ধনপ্রাপ্ত কোনো চিকিৎসক/ দন্ত চিকিৎসক ব্যবহার করতে পারবেন না। কেননা এসব স্বীকৃতিবিহীন ডিগ্রি/পদবি ব্যবহারে কারো অতিরিক্ত পেশাগত শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে বলে জনসাধারণ মনে করতে পারেন এবং প্রতারিত হতে পারেন।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে কোনো কোনো নিবন্ধিত চিকিৎসক/ দন্ত চিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে পিজিটি, বিএইচএস, এফসিপিএস (পার্ট-১ ও পার্ট-২), এমডি (ইন কোর্স) (পার্ট-১ ও পার্ট-২), (থিসিস পর্ব), (লাস্ট পার্ট), কোর্স কম্পলিটেড (সিসি), এমএস (ইন কোর্স) (পার্ট-১ ও পার্ট-২) (থিসিস পর্ব) কোর্স কম্পলিটেড (সিসি) এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত ফেলোশিপ এবং ট্রেনিংগুলো যেমন- এফআরসিপি, এফআরএইচএস, এফআইসিএ, এফআইসিএস, এফএএমএস, এফআইএজিপি ইত্যাদি উল্লেখ করছেন, যা কোনো স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা নয় এবং বিএমঅ্যান্ডডিসি স্বীকৃত নয়। এছাড়াও স্বীকৃত পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, গাইনী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাদের পরিচিতি করে তা প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে ব্যবহার করছেন, যা জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণামূলক কাজ হিসেবে গণ্য। এটা স্পষ্টতই বিএমঅ্যান্ডডিসি আইনের পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এইজন্য অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হতে পারেন।
এ অবস্থায় বিএমঅ্যান্ডডিসি থেকে প্রাপ্ত রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ আইনে উল্লেখিত অন্যান্য শাস্তি পরিহার করার লক্ষ্যে নিবন্ধিত সব চিকিৎসক/দন্ত চিকিৎসককে বিএমঅ্যান্ডডিসি স্বীকৃত নয় এমন কোনো ডিগ্রি, পদবি, ফেলোশিপ টেনিং ব্যবহার না করা এবং স্বীকৃত পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও নামের পর বিশেষজ্ঞ পদবি ব্যবহার না করার জন্য অবহিত করা যাচ্ছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর একটি লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিলেন। ওইদিন জে আর খাঁন (রবিন) বলেছিলেন, দি মেডিক্যাল প্রাকটিশনার অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ এর ৮ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। ৯ ধারা অনুযায়ী শর্তাবলী পূরণ না হলে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। কিন্তু আইনের এসব বিধানে বলবৎ থাকার পরও ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যার অনেকগুলোই অনুমোদনহীন, মানহীন ও সেবা দেওয়ার চেয়ে টাকা উর্পাজনেই মালিকদের একমাত্র উদ্দেশ্য।
তিনি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২০
ইএস/জেডএস