এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে সারাদেশে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে লেমিনেটেড পোস্টার ছাপানো এবং প্রদর্শন বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনের সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, শিল্প সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
২২ জানুয়ারি একটি ইংরেজি দৈনিকে ‘লেমিনেটেড পোস্টার ইন সিটি পুলস: এ বিগ থ্রেট টু এনভায়রনমেন্ট’ শিরোনামের প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার মনোজ কুমার ভৌমিক ও অ্যাডভোকেট সুলায়মান হাওলাদার।
পরে মনোজ কুমার ভৌমিক সাংবাদিকদের বলেন, জারি করা এ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় লেমিনেটেড পোস্টার ছাপা, প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাঁটানো পোস্টারের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরপরই প্রদর্শিত সব পোস্টার অপসারণ করে যথাযথভাবে তা ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী উপহার দেওয়ার কথা বললেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্লাস্টিকে মোড়ানো (লেমিনেটেড) নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন গোটা ঢাকা শহর।
প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বৃষ্টি, কুয়াশা, আর্দ্রতা কিংবা ধুলাবালি থেকে পোস্টারগুলো রক্ষা করার জন্য তারা প্লাস্টিকের ব্যবহার করছেন।
ঢাকার নয়টি ওয়ার্ডে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ পোস্টারই প্লাস্টিকে মোড়ানো।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, আশেপাশের অন্তত ২০টি ওয়ার্ডেও একই অবস্থা।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পোস্টার প্লাস্টিকে মোড়ানোর (লেমিনেটেড) কারণে পরিবেশের জন্য মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে। একদিকে এই প্লাস্টিক নষ্ট হবে না। অন্যদিকে, একে পুনরায় ব্যবহার করারও সুযোগ নেই।
তারা আরও বলেছেন, বছরের পর বছর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পড়ে থেকে পরিবেশের ক্ষতি করা ছাড়া এগুলোর আর কোনো কাজ নেই। বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক নর্দমায় গিয়ে জমা হয়ে বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণ হবে।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার হোসেন বলেছেন, এই প্লাস্টিক তৈরিতে যেসব রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার হয়, সেগুলো বিষাক্ত এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
‘পোস্টার মোড়ানোর জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিক পলিথিনের চেয়ে খানিকটা মোটা হয়। কিছু বিশেষ রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পলিথিনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে এই প্লাস্টিক তৈরি করা হয়। এগুলো আবার সূর্যের আলো থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন করে,’ যোগ করেন তিনি।
শুধু পরিবেশবিদরাই নন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
রাজধানীর আরামবাগ এলাকায় এক ছাপাখানায় পোস্টার লিমিনেটিংয়ের কাজ করা হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ শর্তে বলেছেন, ‘ঢাকার প্রতিদিনকার বর্জ্য অপসারণ করতেই আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এগুলো (লেমিনেটেড পোস্টার) অপসারণ করতে আমরা আরও বিপদে পড়বো। ’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক জানিয়েছেন, রাস্তার টোকাইরা এসব পোস্টার এবং প্লাস্টিক সংগ্রহ করে এখানে-সেখানে ফেলে রাখে। এক সময় শহরের যত্রতত্র এই প্লাস্টিক ছড়িয়ে যায়।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে পোস্টারের পাশাপাশি বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সর্বমোট ৭৪৫ জন প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ১৪০ মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, নির্বাচন উপলক্ষে তারা প্রায় ৫০ লাখ পোস্টার ছাপাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঐ পোস্টারের অর্ধেকই মেয়র প্রার্থীদের।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২০/আপডেট: ১২৫০ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস