এই মামলায় রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, চাকরি দেওয়ার নাম করে নরসিংদী থেকে সুন্দরী দেখে গরিব নারীদের ঢাকায় নিয়ে আসতেন পাপিয়া। পরে তাদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন।
এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হট্টগোল করতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, মামলার এজাহার বা রিমান্ড আবেদনে এমন কিছু নেই। রাষ্ট্রপক্ষ এখানে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছে। একপর্যায়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের চাপে ওই প্রসঙ্গে কথা থামিয়ে রিমান্ড আবেদনের উপর শুনানি করেন হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন।
তিন মামলায় শুনানি শেষে আদালত পাপিয়া দম্পতিকে ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পাপিয়াসহ চার আসামিকে এজলাসে তোলা হয়। দুই পুরুষ আসামিকে শুরুতেই কাঠগড়ায় তোলা হলেও আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগে পাপিয়াকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। কাঠগড়ার বাইরে থাকার সময় নারী পুলিশের সঙ্গে উপস্থিত দর্শনার্থী আইনজীবীদের বচসাও হয়। এসময় আইনজীবীরা বলেন, তাকে অবশ্যই কাঠগড়ায় তুলতে হবে। তারা অপকর্ম করবে আর ছবি তুলতে গেলে বাঁধা দেওয়া হবে, এটা কেন? তাদের কেন এত সম্মান দেখাতে হবে!
এরপর রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুরুতেই বিমানবন্দর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সুবাদে ইতোমধ্যে বিজ্ঞ আদালতও অত্র মামলার বিষয় সম্পর্কে অবহিত। তারা অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে দেশ ছাড়তে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন। তাদের কাছ থেকে জাল টাকা, অস্ত্র ও অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র, অর্থ ও মাদকের উৎস জানতে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে তাপস কুমার পাল, হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন ও আজাদ রহমান শুনানি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদন করেন।
তারা বলেন, সংবিধানের ৩২ ও ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী কাউকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করার কথা। কিন্তু এখানে সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করে আটকের ৪৮ ঘণ্টা পর তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে। এই সময়ে তাদের নির্যাতন, এরপর এখন আবার রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
তার একজন আইনজীবী বলেন, মাত্র মামলা হয়েছে। দোষী কী নির্দোষ সাব্যস্ত হওয়ার আগেই মিডিয়া যেভাবে সংবাদ প্রচার করেছে তাতে তারাই অলরেডি বিচার করে ফেলেছে। এ ব্যাপারেও একটা প্রতিকার হওয়া দরকার।
তখন রাষ্ট্রপক্ষে তাপস কুমার পাল একথার উত্তরে বলেন, তাহলে মিডিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করুন। দু’পক্ষের মধ্যে এসময় কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। এ অবস্থা দেখে বিচারক মুচকি হেসে তাদের থামিয়ে রিমান্ড আবেদেরন উপর শুনানি করতে বলেন।
তারা বলেন, ইতোমধ্যে তাদের কাছ থেকে যা উদ্ধার করার তা করা হয়ে গেছে। এখন সত্যমিথ্যা বিচারের সময় বিচার হবে। তাই এই আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।
শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমান জালনোট উদ্ধারের মামলায় চার আসামির পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর শেরেবাংলা নগর থানার অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমান।
পরে দুই মামলায় ১০ দিন করে আরও ২০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, উদ্ধার অস্ত্র ও মাদকের উৎস এবং এর সঙ্গে আর কারা জড়িত তা জানতে তদন্ত কর্মকর্তার চাওয়া রিমান্ড মঞ্জুর করা আবশ্যক।
জবাবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, তাদের গ্রেফতারের সময় অস্ত্র বা মাদক পায়নি। পরে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বললো আপনাদের হেফাজত থেকে অস্ত্র ও মদ পাওয়া গেছে। এখানে গ্রেফতারের পর নাটক সাজানো হয়েছে। পাপিয়ার স্বামী মফিজুর ওরফে সুমন চৌধুরী ছাত্রলীগের নেতা, এলাকায় নির্বাচন করতে চাওয়ায় তাদের দ্বন্দ্বের কারণে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই নাটক সাজিয়েছে।
শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এই দুই মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে তোলার সময় এবং রিমান্ড শুনানিকালে পাপিয়াকে কিছুটা বিমর্ষ দেখা গেলেও তার স্বামী সুমন চৌধুরী স্বাভাবিকই ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
কেআই/এএ