ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রফিক-উল হকের জীবনের প্রথম ‘মামার মামলা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২০
রফিক-উল হকের জীবনের প্রথম ‘মামার মামলা’

ঢাকা: দেশে-বিদেশে সুদীর্ঘ ৬০ বছর ধরে আলো ছড়িয়েছেন আইনাঙ্গনে। আলো ছড়ানো সেই প্রদীপ নিভে গেলো শনিবার।

আইনের বাতিঘর ব্যারিস্টার রফিক-উল হক শুধু রেখে গেলেন নানান স্মৃতি ও কর্ম।

অর্ধযুগ আগে ল’রিপোর্টার্স ফোরাম প্রকাশ করেছিলো ‘সংবিধান ও বিচার বিভাগের ৪০ বছর’ শীর্ষক একটি স্যুভেনির। সেখানে এক প্রবন্ধে তিনি তার জীবনের কিছু অংশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন।

আইন পেশার শুরু দিককার স্মৃতিচারণে তিনি বলেন,‘কলকাতা থেকে এম. এ ও এল.এল.বি পাস করার পর ১৯৬০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করি। আমার প্রথম মামলাটি ছিল ইন্টারেস্টিং। মজা করে নাম দেওয়া যায় ‘মামার মামলা’। আমার এক বন্ধুর মামাকে দেশ বিক্রির দায়ে গ্রেফতার করে সরকার। তিনি ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এক হাজার টাকার বিনিময় কোন এক পাকিস্তানির কাছে মুর্শিদাবাদ বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। মামলা শুনে আদালত জামিন ও রুল দিলেন। বিচারক বললেন, ইফ মুর্শিদাবাদ ক্যান বি সোল্ড বাই ওয়ান ওয়ান থাউজেন্ড টাকা, লেট ইট বি সোল্ড। আমি বলেছিলাম-ইয়েস, মুর্শিদাবাদ ক্যান নট বি সোল্ড। ’

বিভিন্ন আইন প্রণয়নের বিষয়ে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘সরকারের ব্যাংক সংক্রান্ত আইন থেকে শুরু করে নানা আইনি সহযোগিতা দিয়েছি অকুণ্ঠচিত্তে। কোনো সরকারকে আলাদা করে দেখিনি। রাষ্ট্র বা জনগণের কাজ বলে মনে করে আসছি। ’

শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও আইন প্রণয়নে সহযোগিতা দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। সে বিষয়ে তিনি বলেন,‘শুধু দেশেই নয় বেশ কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্রকেও আইনি সহযোগিতা দেওয়ার সুযোগ হয়েছে আইনজীবী জীবনে। যেমন মালদ্বীপের অনেক আইনই আমার হাতে করা। ’

অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার বিষয়ে স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকবার ফিরিয়ে দিয়েও ১৯৯০-এ অল্প দিনের জন্য রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল আমাকে। মাসিক এক টাকা টোকেন বেতনে সে দায়িত্ব নেই। অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার পরপরই একসঙ্গে প্রায় দুই হাজার ডিটেনশনকে (আটক ব্যক্তি) ছেড়ে দিলাম। আদালতে গিয়ে তালিকা দিতাম। বলতাম এগুলো ইললিগ্যাল অর্ডার। এগুলো ছেড়ে দিন। তখন ছিলেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান। তিনি বলতেন, আপনি কি করে দেখলেন? আমি বলতাম আমি দেখেছি। ১২ ও ১৭ নম্বর বাদে বাকি সবগুলো ছেড়ে দিন। সব ইললিগ্যাল অর্ডার। আমি বিশ্বাস করি, অ্যাটর্নি জেনারেল ইজ নট ফর দা পার্টি। হিজ ডিউটি টু এক্সপ্লেন দ্যা ল’বিফোর দ্যা কোর্ট, অ্যান্ড নট টু ডিফেন্ড এনি এভরি অর্ডার পাসড বাই দ্যা গর্ভনমেন্ট। ’

‘আইন পেশার পাশাপাশি শুরু থেকেই সাধ্যমত কিছু সমাজসেবা করে আসছি। কিন্তু তার বিনিময় নিজের বা পরিবারের জন্য কখনও কিছু চাইনি প্রচারের জন্য কোন বাড়াবাড়ি করিনি’ বলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।

সর্বোচ্চ আদালতের এ আইনজীবীর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। মা নূরজাহান বেগম।

শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২০
ইএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।