ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘আবরারের সারা শরীরেই ছিল আঘাতের চিহ্ন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
‘আবরারের সারা শরীরেই ছিল আঘাতের চিহ্ন’ আবরার ফাহাদ রাব্বী

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীর হাত, পা, পিঠসহ প্রায় সারা শরীরেই ছিল আঘাতের চিহ্ন। রোববার (২৩ নভেম্বর) জবানবন্দিতে এ কথা বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ।

এদিন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১এর বিচারক আবু জাফর মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের আদালতে একথা বলেন তিনি। এদিন আরও সাক্ষ্য দেন পুলিশ সদস্য মো. দস্তগীর হোসেন।
জবানবন্দিতে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, আবরারের মরদেহ আমি বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে গ্রহণ করি। এরপর তার মরদেহ ময়নাতদন্তের নিয়ম অনুসারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পাই, তার দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া কোমরের নীচ থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত এবং পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। তার কপালের ডান পাশে একটি আঘাতের চিহ্ন পাই। তবে কোথাও কাঁটাছেড়ার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, বুক ও পেট স্বাভাবিক ছিল। দুই হাতের তালু ও পায়ের তালুতে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। এরপর তার ক্যামিকেল পরীক্ষার জন্য দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। একইদিনে সাক্ষ্য দেন পুলিশ সদস্য মো. দস্তগীর হোসেন। যিনি আবরারের মরদেহ বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। এ নিয়ে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৫ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন।  

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়।  

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উশৃঙ্খল নেতাকর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।

গত বছর ১৩ নভেম্বর মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পু‌লিশের (ডি‌বি) লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. ওয়া‌হিদুজ্জামান।

মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মিফতাহুল ইসলাম জিয়ন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকা‌রো‌ক্তিমূলক জবানব‌ন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মিফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসা‌মি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জা‌মিন আবেদন করেন। আদালত জা‌মিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিন আসা‌মি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রা‌ফিদের নাম এজাহারে ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
কেআই/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।