ঢাকা: সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের বাড়ি উইল করা নিয়ে আইনগত বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য চার আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান।
মনজিল মোরসেদ জানান, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ অনুসারে কোনো মুসলিম কোনো হিন্দু নারীকে বিয়ে করতে পারে কিনা এবং সে স্ত্রী হিসেবে তাকে দেওয়া জগলুল ওয়াহিদের সম্পূর্ণ বাড়ি উইল করার আইনগত ভিত্তি বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য ৪ জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- এ এফ হাসান আরিফ, কামাল-উল-আলম, মো. নুরুল আমিন ও কামরুল হক সিদ্দিকী।
তিনি আরও জানান, আগামী ১২ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে সে পর্যন্ত দুই বোনকে নিরাপত্তা দিতে গুলশান থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক,ইস্টার্ন ব্যাংক,স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক,আইএফআইসি ব্যাংকে মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের অ্যাকাউন্ট থাকলে এবং দুইপক্ষ কোনো স্টেটমেন্ট চাইলে সংশ্লিষ্ট ম্যানেজার তা দেবেন। পরে দুইপক্ষ তা আদালতে দাখিল করবেন। এছাড়া সিটি ব্যাংকের ফাইল আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে হাইকোর্ট ২৬ অক্টোবর বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে সন্ধ্যায় স্ব-প্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন।
আদেশে অনতিবিলম্বে তাদের বাবা মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের গুলশান-২ এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাসায় প্রবেশ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে রাতেই ওই বাড়িতে তাদের প্রবেশ ও অবস্থান নিশ্চিত করার পর রাতেই গুলশান থানার ওসিকে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসারকে টেলিফোনে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এছাড়া ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ওই বাসায় দুই বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গুলশান থানার ওসিসহ ৩ নভেম্বর দুই বোন এবং ওই বাড়িতে থাকা আঞ্জু কাপুরকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়।
এ আদেশের পর ওইদিন রাতেই দুই বোন মুশফিকা মোস্তফা ও মোবাশশারা মোস্তফাকে বাসায় উঠিয়ে দিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গুলশান থানা পুলিশ এবং বাড়ির সামনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।
পরে আদেশ অনুসারে ৩ নভেম্বর দুই মেয়ে ও দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুর গুলশান থানার ওসিকে নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হন। ওইদিন আদালত ওই বাড়ির দাবির পক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র আদালতে দাখিল করতে পক্ষদের নির্দেশ দেন।
তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেওয়া হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে বাড়িটি প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর। গৃহকর্তার মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে তার দুই মেয়ে অবস্থান নেন বাড়ির সামনে। ওই দুই বোনের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না।
গত ১০ অক্টোবর মোস্তফা জগলুলের মৃত্যু হয়। মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ পেশায় পাইলট ছিলেন। ভাইবোনদের মধ্যে শুধু সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশে নেই। দু’দিন ধরে বাড়ির সামনে অবস্থান নেন মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে মুশফিকা ও মোবাশ্বেরা। তারা বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
মুশফিকা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ১৯৮৪ সালে তার মাকে নিয়ে বাবা গুলশানের এই বাসাতেই সংসার শুরু করেছিলেন। তাদের জন্ম এই বাড়িতে। ২০০৫ সালে তাদের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। পরে আঞ্জু কাপুর নামে এক ভারতীয়কে তাদের বাবা বিয়ে করেন। তিনি একাই এখন এই বাড়ির ভোগদখল করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
ইএস/এএটি