ঢাকা: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার ভাতিজা শঙ্খজিৎ সিনহা।
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ শেখ নাজমুল আলমের আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি।
গত ২৮ ডিসেম্বর ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা ও ভাতিজা শঙ্খজিৎ সিনহা সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন। তবে সেদিন নরেন্দ্র কুমারের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এক আসামি কাঠগড়ায় মাথা ঘুরে পড়ে যান। এরপর আদালত শঙ্খজিতের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। সেই অনুযায়ী বুধবার শঙ্খজিৎ আদালতে এসে সাক্ষ্য দেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, চাচা-এসকে সিনহার নির্দেশে উত্তরার শাহজালাল ব্যাংকে তিনি ও তার বাবা একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেই অ্যাকাউন্টে পরে দুই কোটি ২৩ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়। এই অর্থ স্থানান্তরের বিষয়ে তার কিছু জানা ছিল না।
জবানবন্দিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই টাকার মধ্য থেকে পরে ঢাকা ব্যাংক সাভারের ইপিজেড শাখায় তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ৭৮ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়, যার মধ্যে ঢাকা ব্যাংক ইপিজেড শাখায় দুটি সঞ্চয়পত্রে যথাক্রমে ৫০ ও ১০ লাখ টাকা জমা রাখেন। আর বাকি ১৮ লাখ টাকা একই ব্যাংকে জমা রাখেন। আর এই পুরো কাজটি তিনি এসকে সিনহার নির্দেশেই করেছেন।
উপস্থিত আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শঙ্খজিতকে জেরা করবেন না বলে জানান। আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৮ জন সাক্ষী ছিল। তবে বুধবার দুদক কৌঁসলী মীর আহম্মেদ আলী সালাম মামলায় ফারমার্স ব্যাংকের আরও তিনজনকে সাক্ষী হিসেবে গ্রহণের আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। তাই এই মামলায় সবমিলিয়ে মোট ২১ সাক্ষীর ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।
সাক্ষ্য দিতে না আসায় গত ৮ ডিসেম্বর নরেন্দ্র কুমার সিনহা ও ভাতিজা শঙ্খজিৎ সিনহার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।
এই মামলার মোট আসামি ১১ জন। এর মধ্যে কারাগারে থাকা আসামি মাহবুবুল হক চিশতি ওরফে বাবুল চিশতিকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া জামিনে থাকা এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রাক্তন ক্রেডিট প্রধান কাজী সালাহউদ্দিন, সাবেক এমডি এবিএম শামীম, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন কুমার সাহা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এই মামলায় এসকে সিনহাসহ মোট ৪ আসামি এখন পলাতক। তারা হলেন— ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, সাভারের শ্রীমতি সান্ত্রী রায় (সিমি) ও শ্রী রণজিৎ চন্দ্র সাহা।
গত ৯ ডিসেম্বর ১১ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। অভিযোপত্রে ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতীর (বাবুল চিশতী) নাম নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর তদন্তকালে এজাহারনামীয় আসামি ফারমার্স ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক (গুলশান) মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদ মারা যাওয়ায় তাকে এই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গত ১৩ আগস্ট এই আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে তাদের বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। গত ১৮ আগস্ট এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওইদিন মামলার বাদী দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল সাক্ষ্য দেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া ঋণের মাধ্যমে চার কোটি টাকা স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করার অভিযোগ মামলাটি করে দুদক। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দুটি অ্যাকাউন্ট খোলে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রণজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে। দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন।
ওই বছরের ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর ‘অস্বাভাবিক দ্রুততার’ সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২১
কেআই/এমজেএফ