ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে নোটিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে নোটিশ

ঢাকা: করোনা মহামারি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এবং অনলাইনে শতভাগ ক্লাস নেওয়া তথা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।



নোটিশপ্রাপ্তির সাতদিনের মধ্যে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার এবং ৩০ দিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে যৌথ কমিটি গঠন করে অনলাইনে শতভাগ ক্লাস নেওয়া তথা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ডিজিটাল শিক্ষা কনটেন্ট তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় রিট দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

২৭ জানুয়ারি (বুধবার) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এ নোটিশ পাঠানো হয়।

আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার বলেন, সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠক, ভার্চ্যুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম, টেলিমেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবা কার্যক্রম সরকার সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করছে। করোনা মহামারি সময়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ, ই-কমার্সে কেনাকাটা বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৫০ লাখ। আর এসব কিছুর ব্যাকবোন ছিলো ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক।  

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির প্রকাশিত জুন ২০২০ মাসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আগের চেয়ে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৪৯ লাখ ৫ হাজার।

তিনি আরও বলেন, আধুনিক যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে প্রযুক্তি। শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সারা বিশ্বব্যাপী। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০, জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯ ও ৭ম পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনায় বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত। সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা, কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা লাভ এবং তা আয়ত্ত ও প্রয়োগ করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও জাতিসংঘ গৃহিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) সবার জন্য টেকসই গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটে ১ম-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষা উপকরণের ডাউনলোড সুবিধাযুক্ত ডিজিটাল শিক্ষা কনটেন্ট আছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের গৃহিত নানা পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের সব জেলাতে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা থাকায় বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে থেকেই সহজে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও অংশগ্রহণ করা সম্ভব।

আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগের ক্লাস রুমগুলো ছোট, পর্যাপ্ত পরিষ্কার টয়লেট নাই এবং স্থানের স্বল্পতাও আছে। ফলে করোনাকালীন নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা অসম্ভব। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান চালু করা হলে প্রতিটি শিক্ষাথীর সঙ্গে অভিভাবকরাও যাবেন। ব্যাপক যানবাহনের সমাগম হবে। ফলে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না। এছাড়া শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ শিক্ষক শিক্ষিকার বয়স ৪০ এর ওপরে হওয়ায় তাদেরও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১ম-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ছোট হওয়ায় মুখে মাস্ক সব সময় পড়া, নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মানা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে ব্যাপক আশংকা ও সংশয় আছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলা হলে শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলবে, ক্লাস রুমে একে অন্যের সঙ্গে আগের মতন মেলামেশা করবে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকা,কর্মকর্তা-কর্মচারী,অভিভাবক-শিক্ষাথীদের মধ্যে ব্যাপক আকারে দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়ায় আশংকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে। শিক্ষা গ্রহণের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সরকার প্রতিটি জনগণের জান মালের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। তাই করোনা মহামারি সময়ে যেহেতু অনলাইনে পাঠদানের সুযোগ আছে সেহেতু জীবন সংশয়ের আশংকা রেখে করোনা মহামারি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সঠিক হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।