ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু ধর্ষণের প্রতিবেদন-তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু ধর্ষণের প্রতিবেদন-তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ

ঢাকা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় মেডিক্যাল প্রতিবেদনে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আসা এবং তদন্তে গাফিলতির ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

আদালত চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেছেন, হাসপাতালে হাজিরা দিতে এসে আমাদের জীবন আপনারা ক্লার্ক, পিয়নের ওপর ছেড়ে দিয়ে ব্যক্তিগত প্রাকটিসে নেমে পড়েন।

এ কারণে তো এমনটা হবেই। কিন্তু এটা আপনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এবং সিভিল সার্জনসহ ডাক্তাররা তলবে হাজির হলে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আদালত তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, যেখানে ধর্ষণ হয়েছে কিনা তা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তারপরও যদি ধরেও নেই যে, ১১ বছরের শিশুটি ধর্ষণ করেছে। তারপরও কি তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া যায়? অথচ আপনি সেটা দিয়ে দিলেন। ভাবতে পারেন, এর ফলে ছেলেটির কী হতে পারে? যেখানে আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।

আদালত আগামী ১১ মার্চ পরবর্তী শুনানি ও আদেশের দিন নির্ধারণ করেছেন।

এ সময় আদালতে উপস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিছুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহসহ ১২ পুলিশ কর্মকর্তা ও চিকিৎসক হাজির হয়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। ভবিষ্যতে আর এরকম ভুল হবে না বলেও আদালতের কাছে অঙ্গীকার করেন তারা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম। চিকিৎসকদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট বাকির উদ্দিন ভুইয়া। আসামিপক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে।

আইনজীবীরা জানান, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ভিকটিম শিশুর পিতা নাসিরনগর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, ৪ সেপ্টেম্বর তার ৭ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মামলায় আসামির বয়স উল্লেখ করা হয় ১৫ বছর।

ওই মামলায় গত বছরের ৩ নভেম্বর শিশুটির পক্ষে আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। ওই জামিন আবেদনের শুনানিতে এ বিষয়গুলো উঠে আসে। পাশাপাশি শিশুটিকে আদালত আগাম জামিন দেন।

তার আইনজীবী শাহপরান চৌধুরী জানান, জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী শিশুর বয়স ১০ বছর। বয়স বিবেচনায় আমরা আদালতে জামিন প্রার্থনা করি। আদালত আমাদের আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলার প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করতে নির্দেশ দেন।  দাখিলকৃত মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখে আদালতের খটকা লাগে। এর ধারাবাহিকতায় ১৭ জানুয়ারি রোববার আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদেশে পুলিশ ও চিকিৎসকদের ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দিয়ে মামলাটির কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন।

পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজিকে এ ঘটনা তদন্ত করে একমাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।