ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ চেয়ে ১০২ আইনজীবীর রিট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ চেয়ে ১০২ আইনজীবীর রিট

ঢাকা: পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে আসা অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ (পুলিশ কমপ্লেইন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন (পিসিআইসি) গঠন করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ১০২ জন আইনজীবীর পক্ষে এ রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

শিশির মনির জানান, রিট আবেদনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, আইনের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছে। কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করে তাদের মতামত সম্বলিত রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে দাখিল করবে।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।  

রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয়েছে।  

আইনজীবী শিশির মনির আরও জানান, আবেদনে পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান, পুলিশের গৌরবময় অর্জনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাদের শৃঙ্খলা বিধানের বর্তমান আইনি কাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যদের সংঘটিত অপরাধ ও অসদাচরণের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্তে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৫৮৯টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। উক্ত ঘটনাগুলোর সংবাদ রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিটে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অভাবকে এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে উল্লেখ করে শিশির মনির আরও জানান, দৃষ্টান্ত হিসেবে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা ছয়টি মামলার অনুলিপি সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা চূড়ান্ত রিপোর্ট বা আপসের মাধ্যমে অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন।

‘তদন্ত’ হলো বিচারের প্রাথমিক ধাপ। ন্যায়বিচারের জন্য প্রধান শর্ত হলো সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। সুষ্ঠু তদন্ত সংবিধানের ৩৫(৩) এবং ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের উপরই ন্যস্ত। ফলে উক্ত তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ২০০৭ সালে ‘পুলিশ অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট কমিশন’ গঠনের বিধান প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সেই খসড়া অধ্যাদেশ আজও আইনে পরিণত হয়নি। ’

আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৬ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ‘প্রকাশ সিং বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলায় পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সাত দফা নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট অথরিটি’ গঠন। নির্দেশনা মেনে ইতোমধ্যে ২৭টি অঙ্গরাজ্যে ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট অথরিটি’ গঠন করা হয়েছে।  

অ্যাডভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন, ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সাইফুল ইসলাম, শিকদার মাহমুদুর রাজি, শ্যাম সুন্দর দাস, ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম, মো. শাহাবুদ্দিন খান (লার্জ), অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল আলীমসহ ১০২ জন আইনজীবী এ রিট করেন।  

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে একটি আইনি নোটিশও পাঠানো হয়েছিল বলে জানান শিশির মনির।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।