ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

১২ বছরের শিশুর ঘাড়ে ভাই হত্যার দায়: নজরে নিলেন হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২১
১২ বছরের শিশুর ঘাড়ে ভাই হত্যার দায়: নজরে নিলেন হাইকোর্ট

ঢাকা: ৮ বছরের ছোট ভাই হত্যা মামলায় ১২ বছরের বড় ভাইয়ের কাছ থেকে যদি জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়, তাহলে সেটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২১ জুন) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।



বগুড়ার কাটাখালীতে মহিদুল ইসলামের ৮ বছরের ছোট ছেলে হত্যা মামলায় ১২ বছরের বড় ছেলের ‘জোর করে স্বীকারোক্তি’ নেওয়ার বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১১ জুন ‘বিয়ারিং দ্য আনবিয়ারেবল’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে এই মামলায় শিশু আদালতের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের ৫ আইনজীবী আবেদন করেন।

আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।  

শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, একজন বাবা তার এক সন্তানকে হারালেন, ওই সন্তান হত্যার অভিযোগে বড় ছেলে যার বয়স ১২ বছর, সে হয় আসামি। উল্টো বাড়িঘরও ছাড়তে হয়েছে সন্তানের বাবা-মাকে।

তিনি বলেন, ১২ বছরের একটি শিশুকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি নিয়ে নেওয়া হলো। শিশু আদালতের সামনে আসলো অথচ আইন থাকা সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ নেই। এই কারণে বিষয়টি দেখভালের জন্য আমরা আপনাদের কাছে এসেছি। যাতে ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়ে সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন হয়।

শুনানিতে আদালত বলেন, এটা তো দুঃখজনক। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে এবং এটি যদি সত্য হয়, তাহলে সেটি আমাদের দেশের জন্য দুঃখজনক। আমরা এখনও জানি না কি ঘটেছে। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্য বলেন আদালত।

 একইসঙ্গে এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ২৯ জুন (মঙ্গলবার) দিন রেখেছেন।

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট ৮ বছরের শিশুর মরদেহ উদ্ধারের একদিন পর সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন তার বাবা মহিদুল। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর হঠাৎ করেই স্থানীয় থানার একদল পুলিশ তার বাড়িতে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে ১২ বছরের বড় ছেলেকে নিয়ে যায় তারা। ‘আমরা পুলিশের সঙ্গে থানায় যাই। কিন্তু মামলাটির তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার আমাকে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেননি’, অভিযোগ করেন মহিদুল।

তিনি বলেন, ‘ছেলেকে দেখতে না পেলেও আমরা তার চিৎকার শুনতে পাই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আমাদের বাড়ি চলে যেতে বলে এবং পরদিন আদালতে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে বলে। ’ পরদিন ৩০ নভেম্বর পুলিশ বড় ছেলেকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। সেখানেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। বাবা-মা ছোট ভাইকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসায় তাকে খুন করেছে বলে জানায় বড় ছেলে।

অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন এবং পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেন। কিন্তু, সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিটি শুনানিতেই উপস্থিত থাকতে হয়েছে ওই শিশুকে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১২ বছর বয়সী শিশুটিকে শুধু ভাই হত্যা মামলায় গ্রেফতারই দেখানো হয়নি, তার কাছ থেকে জোরজবরদস্তি করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ দিনমজুর মহিদুলের।

তিনি বলেন, ‘খুনিরা প্রভাবশালী। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছে। আমার ছোট ছেলেকে খুনের স্বীকারোক্তি দিতে বড় ছেলেকে বাধ্য করা হয়েছে। ’

বড় ছেলের জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাকেই একমাত্র অভিযুক্ত দেখিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু, মহিদুল এতে নারাজি দিলে, ২০১৭ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)  মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত।

পিবিআইয়ের চার বছরের তদন্তে বড় ছেলে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। পিবিআই খুনের সঙ্গে জড়িত দু’জনকে গ্রেফতারও করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২১
ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।