ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

প্রজ্ঞাপনে অস্পষ্টতা: ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হচ্ছে না ভার্চ্যুয়াল শুনানি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২১
প্রজ্ঞাপনে অস্পষ্টতা: ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হচ্ছে না ভার্চ্যুয়াল শুনানি

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের জারি করা প্রজ্ঞাপন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনজীবীদের মধ্যে ঘুরছিল নানা প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে রোববার (২৫ জুলাই) আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও দিনভর ছিলেন অপেক্ষায়।

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আসে, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএমএম) বা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে হাজতি আসামির ভার্চ্যুয়াল জামিন শুনানির সুযোগ থাকছে না।

গত ২৩ জুলাই নিম্ন আদালত সীমিত আকারে চালু রাখার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবর স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তির বিষয় শিরোনামে বলা হয়, ‘করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অধস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনাল সমূহের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে পরিচালনা প্রসঙ্গে। ’

বিজ্ঞপ্তির প্রথম অংশে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় করোনাজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করায় আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত অধস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনালসমূহের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে পরিচালনা করার সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ’

বিজ্ঞপ্তির এই অংশ দেখে আদালত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেন, সীমিত আকারে অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চালু থাকবে। তবে বিজ্ঞপ্তির পরবর্তী অংশের বক্তব্য থেকে ধোয়াশা সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞপ্তির পরবর্তী অংশে শুধু জেলা ও দায়রা জজ এবং মহানগরের ক্ষেত্রে মহানগর দায়রা জজের কাজের পরিসর উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ দেওয়ানি ও ফৌজদারি এবং মহানগর দায়রা জজ ফৌজদারি জরুরি দরখাস্তসমূহ প্রয়োজন অনুযায়ী তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে পারবেন। ’

বিজ্ঞপ্তিতে ছয়টি পয়েন্টে অন্য আদালতের কাজের কথা উল্লেখ করা হয়। তবে ক্রম অনুসারে ১ নম্বর পয়েন্ট উল্লেখ না করে ২ থেকে শুরু করা হয়েছে। বাকি যে পাঁচটি পয়েন্ট রয়েছে তাতে শুধু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শারীরিক উপস্থিতিতে চালুর কথা বলা হয়েছে। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার বা আটক আসামিকে হাজিরের (প্রডাকশন) মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাজ সীমাবদ্ধ রাখা হয়। এর বাইরে আইনের সঙ্গে সংঘাতে আসা শিশুকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার কথা বলা হয়। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বা অন্য কোনো কোর্টে ভার্চ্যুয়াল শুনানির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তির পরবর্তী অংশে কিছু বলা হয়নি।

তাই রোববার দিনভর আইনজীবী ও আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো লকডাউনে তাদের কাজের পরিসর নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে থাকে। এদিন দুপুরে সিএমএম আদালতের নকলখানা, জুডিসিয়াল মুন্সিখানা, নেজারত, এজলাস কক্ষ ও পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখায় একই চিত্র দেখা যায়। এসব শাখার কর্মকর্তারা জানান, তারা বুঝতে পারছেন না আদালতের কার্যক্রম লকডাউনে কীভাবে চলবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। আইনজীবীরাও সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো থেকে এসব তথ্য জানার চেষ্টা করেন।

দিনভর অপেক্ষা শেষে বিকেলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভার্চ্যুয়াল জামিন শুনানি হচ্ছে না। একইভাবে মহানগর দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালত ব্যতীত অন্য ট্রাইব্যুনাল ও আদালতগুলোতেও ভার্চ্যুয়াল জামিন শুনানি হচ্ছে না।

জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির দফতর সম্পাদক জাকির হোসাইন লিঙ্কন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সার্কুলারের শিরোনামে সব আদালত ও ট্রাইব্যুনাল সীমিত আকারে খোলা রাখার কথা বলা হয়েছিল। সেই হিসেবে লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম কতদূর চলবে এ নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত আদালত থেকে জানানো হয়েছে শুধু জেলা ও দায়রা জজ এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন শুনানি হবে। তাই এই দুটি আদালত ব্যতীত অন্য কোনো আদালতে হাজতি আসামির ভার্চ্যুয়াল জামিন শুনানির সুযোগ থাকছে না। এর বাইরে গ্রেফতার বা আটক আসামিদের উপস্থাপনের জন্য (প্রডাকশন) সবসময় যেভাবে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট কাজ করে থাকে সেভাবেই চলবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২৩০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২১
কেআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।