ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ইউনাইটেডে অগ্নিকাণ্ড: কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেলো ৪ পরিবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২১
ইউনাইটেডে অগ্নিকাণ্ড: কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেলো ৪ পরিবার

ঢাকা: অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে আদালতের নির্দেশে ২৫ লাখ টাকা করে দিয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতাল। এ অর্থ পরিশোধের পর সুপ্রিম কোর্টকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী নিয়াজ মুহম্মদ মাহবুব।

গত ১১ জানুয়ারি এক আদেশে হাইকোর্ট চার পরিবারকে আপাতত ৩০ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ১৫ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন।

পরে ইউনাইটেড হাসপাতালের আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

এর ধারাবাহিকতায় আবেদনটি আপিল বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২৯ এপ্রিল ২৫ লাখ টাকা করে এক মাসের মধ্যে পরিশোধের আদেশ দেন। এ আদেশ অনুসারে চার পরিবারকে চেক হস্তান্তার করে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ২৮ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ারের পাঠানো বার্তায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী। তারা হলেন—রিয়াজুল আলম (৪৫), খোদেজা বেগম (৭০), ভেরুন অ্যান্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫) ও মো. মাহবুব (৫০)।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই বছরের ২৮ মে বুধবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে মূল ভবনের বাইরে হাসপাতাল সংলগ্ন করোনা আইসোলেশন ইউনিটে সম্ভবত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন আইসোলেশন ইউনিটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বাতাসের তীব্রতায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে ভর্তি পাঁচজন রোগীকে বাইরে বের করা সম্ভব হয়নি। তারা ভেতরেই মারা যান। আইসোলেশন ইউনিটের পাঁচজনই করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।

এ ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপমৃত্যুর মামলা করলেও আগুনে নিহত ভেরুন অ্যান্থনি পলের পরিবার ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে’ মামলা করেন।

মামলায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), পরিচালক, করোনা ইউনিটে সে সময় কর্মরত ডাক্তার-নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।

ওই বছরের ৩০ মে এ ঘটনায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন ব্যারিস্টার নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব। ১ জুন আরও একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ রাজীব ও ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। পরে গত ২ জুন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে ১৪ জুনের মধ্যে আলাদা প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতির কথা রয়েছে। রাজউক বলছে, করোনার জন্য আলাদা করে আইসেলেশন ইউনিট করতে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো।

এরপর আদালত গত বছরের ২৯ জুন সমঝোতা করতে আদেশ দিয়েছিলেন। তবে অবহেলা জনিত মৃত্যুর অভিযোগের মামলার তদন্তও দ্রুত সম্পন্ন করতে বলেছিলেন।

পরে একই বছরের ১৫ জুলাই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা করে  ক্ষতিপূরণের ওই আদেশ দিয়েছিলেন।

এর বিরুদ্ধে ইউনাইটেডের আবেদনের পর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।

পরবর্তীতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে আদালত বলেছেন, হাইকোর্টের যে কোনো রিট বেঞ্চে আবেদনগুলো উপস্থাপন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আইন অনুসারে আদেশ দিতে পারবেন।

সে অনুসারে উপস্থাপনের পর চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি নতুন করে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

ওই চারজনের মধ্যে একজনের পরিবার সমঝোতা করে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে আগে অর্থ গ্রহণ করেছিলেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক, ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার  মোস্তাফিজুর রহমান খান ও তানজীব উল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২১
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।