ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

এটা অবহেলা নয়, পুলিশ কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২১
এটা অবহেলা নয়, পুলিশ কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট

ঢাকা: ৮ বছরের ছোট ভাই হত্যা মামলায় ১২ বছরের বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ‘জোর জবরদস্তি করে’ স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করার অভিযোগের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার (২২ আগস্ট) সাবেক ও বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা হাজিরের পর আদালত বলেছেন, এটা তো মারাত্মক একটা অভিযোগ।

নেগলিজেন্স (অবহেলা) হয় কখন, সেটা মনের অজান্তে হয়। এটা তো অবহেলা না।

এ ঘটনায় সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা নিঃর্শত ক্ষমা চেয়ে তলব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। তবে আদালত এতে সন্তুষ্ট না হয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ৬ সেপ্টেম্বর দিন রেখেছেন। ওই দিন সাবেক তদন্ত কর্মকর্তাকে ফের হাজির হতে বলেছেন।

আগের আদেশ অনুসারে সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে ও বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা নথি নিয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হন।

দুইজন হলেন- মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন সারিয়াকান্দির উপ-পরিদর্শক বর্তমানে নাটোরে সিআইডির পরিদর্শক নয়ন কুমার এবং বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়ার পিবিআইয়ের উপ পরিদর্শক মো. মনসুর আলী।

শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। এখন তার আবেদনে আপনারা যদি সন্তুষ্ট হন। তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। এ সময় আদালত বলে, উনি যদি ভুল করেন তাহলে তাকে কী আমরা ছেড়ে দেবো?

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেটা আপনাদের বিবেচনা ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। আমি বলতে চাচ্ছি তিনি প্রসিকিউশনের অংশ। তিনি যে ভুল করেছেন সে ভুলের জন্য তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।

তখন আদালত বলেন, এটা মারাত্মক অপরাধ, যেটা তিনি করেছেন। তিনি এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে করেছেন। ১২ বছরের একটি শিশুর স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছে ‘আমি আমার ভাইকে মেরে ফেলেছি। ’ এটা কী সম্ভব? ১২ বছরের একটি ছেলে ৮ বছরের একটি ছেলেকে মেরে ফেলবে?।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা বেদনাদায়ক। এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

এ সময় আদালত বলেন, আপনি (তদন্ত কর্মকর্তা) কীভাবে ১৬৪ (স্বীকারোক্তি) নিলেন। এটা তো সিরিয়াস একটা অভিযোগ। নেগলিজেন্স (অবহেলা) হয় কখন, সেটা মনের অজান্তে হয়। এটা তো অবহেলা না। এটা মারাত্মক অপরাধ।

বগুড়ার কাটাখালীতে মহিদুল ইসলামের ৮ বছরের ছোট ছেলে হত্যা মামলায় ১২ বছরের বড় ছেলের ‘জোর করে স্বীকারোক্তি’ নেওয়ার বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১১ জুন ‘বিয়ারিং দ্য আনবিয়ারেবল’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে এই মামলায় শিশু আদালতের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের ৫ আইনজীবী আবেদন করেন।

ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন সারিয়াকান্দির উপ পরিদর্শক বর্তমানে নাটোরে সিআইডির পরিদর্শক নয়ন কুমারকে হাজির হয়ে এ ঘটনার লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলেন।  

অপরদিকে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়ার পিবিআইয়ের উপ পরিদর্শক মো. মনসুর আলীকে মামলার নথি (সিডি) নিয়ে হাজির থাকতে বলেন। সে অনুসারে তারা হাজির হন।

নয়ন কুমার ওই শিশুকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছিলেন। আর মনসুর আলী ওই শিশুকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন দুই আসামিকে অভিযু্ক্ত করে চার্জশিট দেন।  

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট ৮ বছরের শিশুর মরদেহ উদ্ধারের একদিন পর সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন তার বাবা মহিদুল। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর হঠাৎ করেই স্থানীয় থানার একদল পুলিশ তার বাড়িতে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে ১২ বছরের বড় ছেলেকে নিয়ে যায় তারা।

‘আমরা পুলিশের সঙ্গে থানায় যাই। কিন্তু, মামলাটির তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার আমাকে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেননি’, অভিযোগ করেন মহিদুল।

তিনি বলেন, ‘ছেলেকে দেখতে না পেলেও আমরা তার চিৎকার শুনতে পাই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আমাদের বাড়ি চলে যেতে বলে এবং পরদিন আদালতে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে বলে। ’

পরদিন ৩০ নভেম্বর পুলিশ বড় ছেলেকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। সেখানেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। বাবা-মা ছোট ভাইকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসায় তাকে খুন করেছে বলে জানায় বড় ছেলে।

অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন এবং পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেন। কিন্তু, সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিটি শুনানিতেই উপস্থিত থাকতে হয়েছে ওই শিশুকে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১২ বছর বয়সী শিশুটিকে শুধু ভাই হত্যা মামলায় গ্রেফতারই দেখানো হয়নি, তার কাছ থেকে জোরজবরদস্তি করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ দিনমজুর মহিদুলের।

তিনি বলেন, ‘খুনিরা প্রভাবশালী। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। আমার ছোট ছেলেকে খুনের স্বীকারোক্তি দিতে বড় ছেলেকে বাধ্য করা হয়েছে। ’

বড় ছেলের জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাকেই একমাত্র অভিযুক্ত দেখিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু, মহিদুল এতে নারাজি দিলে, ২০১৭ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত।

পিবিআইয়ের চার বছরের তদন্তে বড় ছেলে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। পিবিআই খুনের সঙ্গে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতারও করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২১
ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।