ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আমিনবাজারে ৬ ছাত্র হত্যা: ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২১
আমিনবাজারে ৬ ছাত্র হত্যা: ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

ঢাকা: সাভারের আমিনবাজারে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রায় হলো।

 

বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান এই রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আবদুল মালেক, সাঈদ মেম্বার, আবদুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেফু, নিহার ওরফে জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবর রহমান, আনোয়ার হোসেন, রজুর আলী সোহাগ, আলম, রানা ও আ. হামিদ, আসলাম মিয়া। তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া দণ্ডবিধির ২০১/৩৪ ধারায় তাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- শাহীন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন,  মো. ওয়াসিম, সাত্তার, সেলিম, মনির হোসেন, আলমগীর, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নূর ইসলাম, শাহাদাত হোসেন রুবেল, টুটুল, মাসুদ, মোখলেছ ও তোতন, সাইফুল।

এছাড়া তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া দণ্ডবিধির ২০১/৩৪ ধারায় তাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। আদালত ২৫ আসামিকে খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাদশা মিয়া, সালাম, আফজাল, অখিল খন্দকার, নিজাম, রহিম, শাহজাহান, সুলতান, সোহাগ, লেমন, সায়মন, এনায়েত, দুলাল, হায়দার, খালেক, ইমান আলী, আলম, আমিন, সালেহ আহমেদ,  শামসুল হক, রহিম-২, মো. সেলিম, সানোয়ার, আনোয়ার ও সাইফুল।

এছাড়া বিচার চলাকালে কবির হোসেন, রাশেদ, পর্বত মারা যাওয়ায় তাদেরকে অত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

গত ২২ নভেম্বর এই মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ওইদিনই রায়র জন্য ২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।

২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলারচরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন ধানমন্ডির ম্যাপললিফ স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান।

নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। ওই ঘটনার পর ডাকাতির অভিযোগে আল-আমিনসহ নিহতদের নামে সাভার মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। এরপর ছাত্র অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার মুখে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে। পরে মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

এ অভিযোগপত্রের পরে মামলাটি বিচারের জন্য এই আদালতে আসে। ২০১৩ সালের ৮ জুলাই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এ ছাড়া ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

হত্যা মামলার ৬০ আসামির মধ্যে ছয়জন পলাতক এবং এছাড়া দুই আসামি মারা যাওয়ায় অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাকি ৫২ আসামির একজন বাদে সবাই জামিনে ছিলেন। গত ২২ নভেম্বর তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ মামলায় ১৪ আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষে ৫৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২১
কেআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।