ঢাকা: দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারকদেরকে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি।
বিচারকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারকরা তাঁদের মেধা ও মনন প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন দেশবাসী তা প্রত্যাশা করে। ’
বিচারকদের আরও বেশি কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিচার কাজ একটা জটিল বিষয়। কিন্তু তারপরও আমি বলবো মামলার পরিমাণ দিন দিন যে হারে বাড়ছে সেটাকে আয়ত্তের মধ্যে আনতে হলে বিচারকদের আরও বেশি কাজ করতে হবে’।
‘বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে মামলার রায় হওয়ার পর এর কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে না হয়। ’
‘সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে’ – বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।
জাতির ক্রান্তিকালে যেসব বিচারকরা বিবেক বিক্রি করে দেননি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আজকের এই সুপ্রিম কোর্ট দিবসের অনুষ্ঠানে আমি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি সুপ্রিম কোর্টের সেইসব অকুতোভয় বিচারপতিদের যাঁরা বন্দুকের নলের কাছে নতি স্বীকার করেননি। তাঁদের বিবেককে কখনও বিকিয়ে দেননি। এছাড়া আইনজীবীদের ভূমিকাও আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি’।
‘জাতির ক্রান্তিকালে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তার ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানকে রক্ষা করেছে’।
বিচার কাজ ও মামলা ব্যবস্থাপনায় গতি আনতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে এখন মানুষের হাতে হাতে স্মার্টফোন। প্রযুক্তির উৎকর্ষে মানুষ নানা ধরনের অ্যাপস ব্যবহার করে দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করছে। এই যুগ চেতনার সন্ধিক্ষণে আদালত ব্যবস্থাপনায়ও আমূল পরিবর্তন এসেছে’।
‘তথ্য-প্রযুক্তির সব সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনতে হবে’।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশের সব আদালতের কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে বিচার কার্যক্রমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে’।
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু কোর্ট অব রেকর্ড সেহেতু এর সব নথিকে ডিজিটাল নথিতে পরিণত করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সব কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরি’।
ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে কজলিস্ট (কার্যতালিকা) চালু এবং অনলাইন বেল কনফার্মেশন ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চলার কথা উল্লেখ করেন আবদুল হামিদ।
বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক এবং এ লক্ষ্য অর্জনে ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে’।
বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ার জন্য আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে’।
করোনাকালে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীসহ বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ দেন রাষ্ট্র প্রধান।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ এম আমিন উদ্দিন এবং বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।
স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট দিবস উদযাপন সংক্রান্ত জাজেস কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১
এমইউএম/ইএস/এএটি