ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

মাঝের অংশ বাদ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে ‘কামরাঙা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
মাঝের অংশ বাদ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে ‘কামরাঙা’ টকজাতীয় ফল কামরাঙা। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: নানান খাবার নিয়ে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। নেই মনগড়া বা মিথ্যা তথ্য বা সন্দেহটুকু প্রতিষ্ঠিত করার প্রবণতাটুকুও।

আর এসবের জন্যই অধিকাংশজনের কাছে উপকারী খাবারগুলো অপছন্দের খাবারে পরিণত হয়ে যায়।
 
মানুষের খাওয়া যেকোনো প্রাকৃতিক ফল-ই উপকারী। কিন্তু মানুষ না জেনে সেই ফল সম্পর্কে পেনিক (আতঙ্ক) সৃষ্টি করে থাকেন। চলে মনগড়া মিথ্যা তথ্যপ্রচার।  

কামরাঙা (Carambola) দেশি প্রজাতির টক জাতীয় একটি প্রাকৃতিক ফল। অন্যান্য ফলের মতোই মানবস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সারাদেশে সারাবছরই কমবেশি পাওয়া যায়। তবে অধিক পরিমাণে টক হওয়ার কারণে এই ফলটি অনেকেই খেতে চায় না।  তবে সবুজ দেহময় অত্যন্ত সুন্দর টিয়াপাখিদের প্রিয় ফল এই কামরাঙা। বাড়িতে একটি কামরাঙা গাছ থাকলে টিয়াপাখিরা এখানে ছুটে আসবেই। তাদের হাঁকডাকে ভরিয়ে তুলবে পুরো বাড়ি। স্কুল-কলেজ বা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমনে তেল-ঝাল দিয়ে মাখা কামরাঙা শিক্ষার্থীদের খুব পছন্দের একটি ভ্রাম্যমাণ খাবার।  

এছাড়া এই ফলটি সম্পর্কে একটি প্রচলিত তথ্য চালু আছে যে, খালিপেটে কামরাঙা খেলে কিডনির সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে এই তথ্যটি শতভাগ সঠিক বা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন এক কৃষিবিশেষজ্ঞ।  

গাছে থোকা থোকা হয়ে কামরাঙা ঝুলে থাকার দৃশ্যই সত্যি অসাধারণ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রকৃতিপ্রেমীরা আরণ্যক পরিবেশের এমন দৃশ্য দেখার জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন। নিজেদের মোবাইলফোনে সেই বৃক্ষের দু-চারটি বা তারও বেশি ছবি ধারন করে নিতে ভুলেন না কিছুতেই।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, কামরাঙা আমাদের দেশি প্রজাতির ফল। অনেকটা টক হলেও গাছপাকা হওয়া সুযোগ পেলে কামরাঙা হালকা মিষ্টিও হয়ে থাকে। আমরা ছোটবেলায় লবণ দিয়ে কামরাঙা খেতাম। ‘কামরাঙার ভেতরের অংশটা খেলে কিডনির সমস্যা হয়’ এমন একটা কথা কামরাঙা নিয়ে প্রচলিত আছে। তবে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। কামরাঙার মাঝখানের অংশটা বাদ দিয়ে খেলেই এই সমস্যা হবে না। আর এটা এমন না যে, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কিছু একটা হয়ে যাবে তা না। দীর্ঘদিন ধরে খেলে হয়তো কোনো সমস্যা হতে পারে। কোনো পুষ্টিবিজ্ঞানীতে যে নিশ্চিত হয়ে এটি বলেছেন এমনটা নয়।  

তিনি আরো বলেন, কামরাঙা আমাদের দেশের ‘মাইনর ফ্রুট’ অর্থাৎ অপ্রধান ফল। এটা তো এমন প্রধান ফল নয় যে, ১২ মাসই খেতে হবে। ফলটি সারাবছরই ফলে। গাছের নিচে নিচে পড়ে থাকে, কেউ খায় না। তবে ছেলেবেলায় আমরা কম খাইনি কিন্তু, প্রচুর খেয়েছি। এখন তো নানান কারণে আমাদের প্রকৃতি থেকে ফলের গাছ উড়ার হয়ে যাচ্ছে। যাদের জায়গা-জমি রয়েছে তাদের দেশিপ্রজাতি মাইনর ফ্রুট অর্থাৎ কামরাঙা, লটকন, অরবড়ই প্রভৃতি গাছের চারা লাগানো দরকার।  

কামরাঙার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘এ’ এর ভালো উৎস এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম কামরাঙায় শক্তি মেলে ৩১ কিলোক্যালরি। শর্করা ৬.৭৩ গ্রাম, চিনি ৩.৯৮ গ্রাম, খাদ্য ফাইবার ২.৮ গ্রাম, স্নেহ ০.৩৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.০৪ গ্রাম, ভিটামিন সি ৩৪.৪ মিলিগ্রাম ছাড়াও কামরাঙায় পাওয়া যায় ভিটামিন এ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিঙ্ক।

ঠাণ্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও জ্বরের জন্য বেশ উপকারী কামরাঙা। প্রাকৃতিক আঁশপূর্ণ এই ফলটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া মুখের রুচিসহ হজম শক্তিও বাড়ায় বলে জানান কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬ ২০২২ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।