বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় তাঁত শিল্পের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে চান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল। তার ইচ্ছা বাংলাদেশের জামদানি, মসলিন এবং ভারতের বালুচুরি নিয়ে বড় আকারে কাজ করার।
আগামী মাসে ঢাকায় অগ্নিমিত্রা পালের ডিজাইন করা পোশাকের একটি প্রদর্শনী তথা ফ্যাশন শো’র প্রস্তুতি চলছে। সে সূত্রে সম্প্রতি অল্প সময়ের জন্য ঢাকা এসেছেন তিনি।
জানালেন, এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশে এসেছেন।
সংক্ষিপ্ত সফরে তুমুল ব্যস্ততার মাঝেও বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অংশ নেন অগ্নিমিত্রা।
শুরুতেই একটি বিষয় জেনে ভালো লাগলো যে প্রদশর্ণী থেকে আয় হওয়া অর্থ বাংলাদেশের এসিডদগ্ধ নারীদের সহায়তার জন্য ব্যয় করা হবে। ফ্যাশন শোটি হবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি।
অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গে আলাপে উঠে আসে তার ফ্যাশন ভাবনা, ভারত এবং বাংলাদেশের হারাতে বসা তাঁত শিল্পের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার আকুলতাসহ নানা বিষয়।
তিনি বলেন, ভাগ্য সহায় না হলে এখানে এসে প্রোগ্রাম করা কিছুতেই সম্ভব হতো না।
ডাক্তার বাবার মেয়ে বড় হয়ে নিজেও ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বড় হয়ে করেন এমবিএ। তবে পছন্দের কোনো পেশায় মন বসাতে পারছিলেন না। শেষে সফল হলেন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে। মাত্র ১০ বছরের ক্যারিয়ারে ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন অগ্নিমিত্রার নাম ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে।
একা কাজ করতে পছন্দ করেন অগ্নিমিত্রা। সম্প্রতি ভারতের একটি চলচ্চিত্রের জন্য ১২০টি পোশাকের ডিজাইন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্য ডিজাইনাররা পোশাকের ডিজাইন করে দেবে আর সেগুলো আমার নামে চলবে, তাহলে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হবে। এটা আমি চাই না’।
বিশ্বাস করেন, যে কোনো কাজে সাফল্যের জন্য পরিশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক গন্তব্য নির্ধারণটিও জরুরি।
ঢাকায় তার আসন্ন শো’র ব্যাপারে অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘এখানে শাড়ি এবং সালোয়ার কামিজ বেশি রাখা হবে। তবে কিছু ওয়ের্স্টান পোশাকও রাখা হবে। তবে বাঙ্গালি নারীর সৌন্দর্য শাড়িতেই পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ পায় বলে শোতে শাড়ির প্রাধান্য থাকবে। ’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সর্ম্পকে অগ্নিমিত্রা জানান, ভারত, বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের বড় ফ্যাশন হাউজে তার ডিজাইন করা পোশাককে আদরনীয় করে তুলতে চান তিনি।
নিজেকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডিজাইনার বিবি রাসেলের একজন ভক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিবি রাসেলের সঙ্গে দেখা হলে বাংলাদেশ নিয়ে কথা হয়। ’
জানালেন, দু’জনের এক সঙ্গে কাজ করারও ইচ্ছে আছে।
আকর্ষণীয় মুখাবয়ব আর দেহসৌষ্ঠবের অধিকারী হয়েও অভিনয় বা মডেলিং-এ কেন আসননি- প্রশ্ন করলে মিষ্টি হেসে বলেন, ‘মডেল হতে হলে তো শুধু সুন্দর হলে হবে না, সঙ্গে ট্যালেন্ট থাকা চাই। ’
শত ব্যস্ততার মধ্যেও একটি অলাভজনক শো’এর জন্য তিনি ছুটে এসেছেন- বিষয়টি উল্লেখ করে ধন্যবাদ জানাতেই তিনি বলেন, ‘কাজ দিয়ে বাংলাদেশের এসিডদগ্ধ অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে। তবে এ ধরণের সহিংসতা বন্ধ হওয়া জরুরি। ’ এজন্য তিনি নারীদের প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের তাগিদ দেন।
ক্যারিয়ারে ঈর্ষণীয় সাফল্যে থাকা এই ফ্যাশন ডিজাইনারও চান সন্তানের কাছে শ্রেষ্ঠ মা হতে। তাই সময় পেলেই পাশে বসে ছেলের পড়া দেখিয়ে দেন।
কথায় কথায় রাত অনেক হয়ে যায়। হোটেল ওয়েস্টিনের লবিতে সেদিনের আন্তরিকতা আলাপচারিতায় দেশের সীমানা আর মানচিত্রের পার্থক্যের কথা যেন ভুলে গিয়েছিলাম। অগ্নিমিত্রা যেন হয়ে উঠেছিলেন আমাদের পাশের বাড়ির অগ্নি দি।
চলে আসার আগে বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিকতা আর খাবারের অনেক প্রশংসা করলেন অগ্নিমিত্রা। বারবার বললেন ছোট ছোট মিষ্টি দিয়ে তৈরি জর্দার কথা।
ঢাকা শহরে যানজটে আটকে থেকে কষ্ট পাওয়ার কথাও বললেন। খুব অবাক হয়ে জানতে চান, এত যানজট এড়িয়ে আমরা কাজ করি কেমন করে?
এর আগে, গ্যালারি অ্যাপেক্স লাইফ ইজ বিউটিফুল, ফ্যাশন শো সামনে রেখে ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে হোটেল রূপসী বাংলায় এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল, দেশটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান নূর, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান এবং অ্যাপেক্স অ্যাডেলকি ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।
অগ্নিমিত্রা জানালেন, ৩ ফেব্রুয়ারির হোটেল রেডিসনে অনুষ্ঠিতব্য ‘গ্যালারি অ্যাপেক্স লাইফ ইজ বিউটিফুল’ ফ্যাশন শোতে কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পাওলী দাম, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও লকেট চ্যাটার্জিসহ বাংলাদেশের সেলিব্রিটিদের অনেকেই অংশ নিচ্ছেন। থাকবেন নোবেল, তিশা, বিন্দু, মিম, মমসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, ২৫ জানুয়ারি, ২০১২