মাঠের ভেতরে ছোট্ট একটি জটলা। জটলার মাঝখানে বেগুনি রঙের পোশাকে একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে।
আগ্রহ নিয়ে জটলার মধ্যে ভিড়ে যাই। কাছে গিয়েই দেখি ফুল আসলে প্রকৃতিতে নয়, থ্রি পিস-ফতুয়ার ওপর ফুটেছে। আকর্ষণীয় হাতে আঁকা ফুলগুলো থ্রি-পিস ও ফতুয়াগুলোকে যেন আরো আকর্ষণীয় করেছে। মেয়েরা দামাদামি করছে। কেউ পুরো টাকা দিচ্ছে, আবার কেউ বাকিতেও কিনছে। দু’এক জনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি এই বিক্রেতা মেয়েটির নাম আফসানা শর্মি। সে বিক্রি করে নিজের নকশা করা কল্পতরুর থ্রি-পিস ও ফতুয়া।
শর্মি ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হয়। নাট্যকলা বিভাগের পড়ালেখা ও ব্যবহারিক ক্লাসের কারণে অন্য কিছু করার ফুসরত মিলছিল না। শর্মির দিনের অনেকটা সময় কাটে নাটকের মহড়া, নাটক তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে। তবুও কিছু একটা করার ভাবনা তাকে সবসময়ই তাড়িয়ে বেড়াতো। কিছু একটা করতে হবে এবং হলে বসেই করতে হবে। কিন্তু কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।
একদিন সিদ্ধান্ত নিলো মোবাইল ব্যাগে নকশা করে বিক্রি করলে মন্দ হবে না। যেই কথা সেই কাজ। নিউমার্কেট থেকে কিছু মোবাইল ব্যাগের কাপড় কিনে ওগুলোর উপরে নিজের হাতে নকশা করে হলের ডাইনিংয়ের পাশে, ফুলের বাগানের পাশে বিক্রি করতে বসে। একে একে সব বিক্রি হল। লাভও হল বেশ কিছু। কয়েক মাস চলল এভাবে। এরপর সে ভাবল আরোও বড় কিছু করতে হবে। মোবাইল ব্যাগের মত নকশা থ্রি-পিস ও ফতুয়াতে করা যায়। কিন্তু হাতে আছে মাত্র ৮০০ টাকা, এই টাকা দিয়ে থ্রি-পিস ও ফতুয়া কেনা যাবে না। তাই কিছু টাকা ধার করতে হবে। এক আপুর থেকে আরও ৮০০ টাকা ধার করে শুরু করেন বুটিকের ব্যবসা। শুরুতেই মাত্র ১৬০০ টাকায় লাভ হয় ৮০০০ টাকা। তখন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলেই বিক্রি হত শর্মির নিজের হাতে ডিজাইন করা এসব পোশাক।
বর্তমানে শর্মির করা নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, শামসুন্নাহার হলে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও শর্মির পোশাক বিক্রি হচ্ছে। বিক্রিও বেড়ে যাওয়ায় লাভ হচ্ছে ভালো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মুক্তা জানান, ‘কল্পতরুর পোশাকগুলো দেখতে খুব ভালো। কারণ এসব পোশাকে নতুন নতুন ফুল থাকে এবং সাধ্যের মধ্যে কেনা যায়। একটি থ্রিপিস ৯৩০-১৬০০ টাকার মধ্যে কেনা যায়। কিন্তু বড় মার্কেটে গেলে এই দামে তেমন ভালো পোশাক পাওয়া যায় না। দিন যায় দিন আসে শর্মির ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। আর তার সাথে বাড়তে থাকে কল্পতরুর বিক্রি আর জনপ্রিয়তা।
প্রায় বছর খানেক হল শর্মি বিয়ে করেছে। বিয়ের পর শ্বশুর আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় ছোটো খাটো একটি দোকান ভাড়া করে দেয়। নিজের তৈরি পোশাক এখান থেকে বিক্রি করছে শর্মি। পোশাকগুলির নাম দিয়েছে সে ‘কল্পতরু’ বুটিক শিল্প। সে হিসেবে ২০১০ সাল থেকে আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলার শর্মির ছোট্ট দোকানটি ‘কল্পতরু’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
বাংলাদেশ সময় ১৭২৩, মার্চ ২৫, ২০১১