ভারতের ব্যাঙ্গালুরে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ইউনাইটেড উইমেন্স ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস-২০১৪।
দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, জাতিসংঘ ইউনিকের পরিচালক কিরণ মেহেরা, ইন্টেল ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট কুমুদ শ্রীনিভাসন, ইথিওপিয়ার ফার্স্ট লেডি রোমান তেসফায়ি, দুবাইয়ের প্রিন্সসহ ভারতের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিভিন্ন প্রদেশের গর্ভনর।
দক্ষিণ এশিয়ার নারীর ক্ষমতায়ন, সমাজ উন্নয়নে অবদান এবং সফল নারী ব্যবসায়ীদের সম্মাননা জানানো হয় ইউনাইটেড উইমেন্স ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস ২০১৪-এ।
বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সফল নারী উদ্যোক্তা এবং সমাজসেবী হিসেবে অ্যাওয়ার্ড জিতে বিরল সম্মান নিয়ে এসেছেন আয়শা আক্তার জাহান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে আয়শা আক্তার নর্থসাউথ ইউভার্সিটি থেকে এমবিএ করেন। শিক্ষাজীবনেই তিনি বুঝতে পারেন, পরিবার ও সমাজে ভালভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। আত্মপ্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তিনিও হতে পারেন স্বাবলম্বী। অন্য নারীদের জন্য অনুকরণীয় একজন নারী।
ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি আগ্রহ ছিল আয়শা আক্তারের, চাকরি করার ইচ্ছা তার কখনোই ছিল না। তাই তো প্রায় দীর্ঘ ২৫ বছর আগে শুরু করেন পোশাক ব্যবসা। পরিশ্রম ও দক্ষতায় আজ তিনি রেনেসা গ্রুপের পরিচালক এবং প্যানডোরা অ্যাসোসিয়েট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ইথিওপিয়ার ফার্স্ট লেডি রোমান তেসফায়ির সঙ্গে
আয়শা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ভারত বা চীনের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় বাংলাদেশের হয়ে কাজের স্বীকৃতি আমাদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবে বিশ্ব দরবারে, শুধুমাত্র নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাংলাদেশকে দেখার আর সুযোগ নেই। আমাদেরও আছে অনেক প্রাপ্তি অনেক অর্জন।
তিনি আরও বলেন, নারী উদ্যোগের সফলতা শুধু অর্থনৈতিক দিক, ব্যবসার পরিধি, সংখ্যাগত কর্মসংস্থান বিবেচনা করলে সঠিক মূল্যায়ন হবে না। একজন নারী ক্ষুদ্র উদ্যোগে নিয়ে সমাজের অন্যদের ও নিজের পরিবারের সদস্যদের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে কাজ করছে এটাই সফলতার বড় মাপকাঠি হতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই অর্জন শুধু আমার নয়, এ সম্মান আমাদের দেশের প্রতিটি নারীর।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী কাজ করেন। যার অধিকাংশ নারী। আমরা তাদের কখনোই শ্রমিক হিসেবে দেখি না। তারা আমাদের বন্ধু, আমার পরিবারের সদস্য। হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও চেষ্টা করি সবার খোঁজ রাখার। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে সেই শুরু থেকে যারা কাজ শুরু করেছিলেন বেশির ভাগ লোক এখনো আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। সবার শ্রমেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি।
এতো গেল ব্যবসায়ী আয়শা আক্তারের পরিচয়, এতিম ও দুস্থ কন্যাশিশুদের জন্য তিনি নিজস্ব আয় দিয়ে গড়ে তুলেছেন পিপলস “রোকেয়া ফাউন্ডেশন” নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।
এখন এখানে ৫০ জন শিশু থাকা ও পড়াশোনা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে। সারা সপ্তাহ কাজ শেষে আমরা সবাই যখন ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে আনন্দ করে কাটাতে চাই, আয়েশা আক্তার ছুটে যান এই শিশুদের মাঝে। আর শিশুরা তাকে আম্মু ডাকে, তিনিও তাদের বুকে টেনে নিয়েছেন, নিজের সন্তানদের মতোই।
এছাড়াও বস্তির সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র পরিবারের শিশুদের সুন্দর জীবন গড়ে তোলার জন্যই সম্প্রতি বনানীর টিঅ্যান্ডটি মাঠ সংলগ্ন বস্তিতে প্রথম স্কুল শুরু করেছে রোকেয়া ফাউন্ডেশন। প্রাথমিকভাবে ৩২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলটি যাত্রা শুরু করলেও অচিরেই ৫০০ শিশুকে শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান আয়েশা আক্তার। তিনি বলেন, শুধু রাজধানীতেই নয় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের সব কয়টি বিভাগে অসহায় শিশুদের জন্য রোকেয়া ফাউন্ডেশন অন্তত একটি উন্নত মানের বিনা বেতনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করবে।
নতুন নারীরা উদ্যোক্তাদের অনেক বেশি সম্ভাবনাময়ী মনে করেন আয়েশা আক্তার। সঠিক প্রশিক্ষণ আর ব্যবসা উপযোগী সহায়ক পরিবেশ পেলে নারী-উদ্যোক্তারা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় একটা ভূমিকা রাখবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ এই অজর্নের জন্য সফল নারী উদ্যোক্তা আয়শা আক্তারকে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে অনেক অভিনন্দন।