গ্রামের নাম চকপাড়া। তবে চৈত্র-বৈশাখ এ দুই মাস গ্রামটিকে মানুষ ‘করলার গ্রাম’ নামে ডাকে।
শ্রীপুর উপজেলা সদর থেকে চকপাড়া গ্রামের দূরত্ব প্রায় দশ কিলোমিটার। এক দশক আগে এ এলাকার কৃষকরা মূলত ধানচাষই বেশি করতেন। বাকি সময় জমিগুলো পতিত পড়ে থাকত। একসময় চকপাড়া গ্রামের কয়েকজন উদ্যোগী কৃষক কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই উচ্চ ফলনশীল জাতের করলা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গা আবাদ শুরু করে। চার মাসে এই মৌসুমী সবজি আবাদ করে প্রথম দফাতেই চমক সৃষ্টি করেন তারা। পরের বছর এলাকার অন্য কৃষকরাও করলার আবাদ শুরু করেন। সফলতা আসে প্রত্যেকের ঘরে। আস্তে আস্তে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে করলার চাষ।
এ বছর চকপাড়া ও এর আশপাশের গ্রামগুলোয় প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিঘা জমিতে করলা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গার আবাদ হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিসার ফখরুল ইসলাম জানালেন। এর সাথে জড়িয়ে আছেন প্রায় দুই হাজার মানুষ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় চকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের অস্থায়ী আড়তে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত করলা ভ্যান বা ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে আসেন। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও প্রতিদিন ১০-১২ ট্রাক ভর্তি করে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
মাওনা ইউপি চেয়ারম্যান আমির হামজা বললেন, করলা চাষের নীরব বিপ্লব ঘটেছে চকপাড়া গ্রামে। এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। করলা চাষ করে বেকার যুবকরা হচ্ছেন স্বনির্ভর। পুরো গ্রামে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো হয়েছে ৫০-৬০টি সেচ পাম্প। আর করলা চাষের জন্য গ্রামের মাটিও যথেষ্ট উপযোগী।
কৃষকরা জানান, স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয় করলার হাইব্রিড বীজ। পলিব্যাগে প্রথমে এই বীজ বপন করা হয় কার্তিক মাসে। আমন কাটার পর অগ্রহায়ণ মাসে চারা রোপণ করা হয়। দেড়-দু মাসের মাথায় ফলন ধরে। তবে নিম্নমানের বীজ সরবরাহের কারণে এ বছর ফলন কিছুটা দেরিতে আসছে বলে তাদের অভিযোগ। বিঘাপ্রতি করলার ফলন ৪০-৪৫ মণ। বর্তমানে বাছাই করা প্রতি মণ করলা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকায়। এমনকি রিজেক্ট করলাও (স্থানীয় ভাষায় লান্ডি) মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।
চাষি আবদুর রহমান জানান, জমিতে হাল চাষ, বীজ সংগ্রহ, পলিব্যাগ, মাচা তৈরি, লেবার ও কীটনাশক কেনাসহ প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ২০-২১ হাজার টাকা। চকপাড়া গ্রামে উৎপাদিত করলার মোট বিক্রি অর্ধ কোটির টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী চাষিরা।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১০০, এপ্রিল ২৩, ২০১১