আমাদের জ্ঞানকে পরিশীলিত, শাণিত এবং সমৃদ্ধ করতে বই পড়ার বিকল্প নেই। এজন্য সময় সুযোগ করে বই পড়তে হবে।
লাইব্রেরি গড়তে যা যা লাগবে
ঘরে নিজস্ব লাইব্রেরি গড়তে প্রথমেই দরকার হবে জায়গা। ঘরের কোন স্থান বা কোন ঘরটি আপনি লাইব্রেরি গড়ার জন্য বেছে নেবেন সেটি আগে ঠিক করুন। আলাদা একটি রুম হলে খুবই ভালো। কারণ ঘিঞ্জি রুমে লাইব্রেরি গড়ে তুললে সেখানে বসে বই পড়ে আরাম পাওয়া যায় না। পড়ায় মনোযোগও দেয়া যায় না ঠিকমতো। এজন্য ঘর যদি অগোছালো হয় তাহলে প্রথমেই ঘরটি গুছিয়ে নিন। ঘর থেকে পুরোনো এবং অপ্রয়োজনীয় আসবাব, মালামাল, কাগজপত্র বের করে বিক্রি করে দিন। আর তা না হলে আপনি বেছে নিন আপনার পছন্দের একটি ঘরের দেয়ালের যে কোনো দিক। এবার দেয়ালের লাগোয়া নিচ থেকে সাত ফুট উঁচু শেলফ তৈরি করিয়ে নিন। অথবা বাজার থেকে শেলফ কিনে আনতে পারেন। তবে শেলফ বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারলে খরচ অনেক কম হবে। শেলফের প্রতিটি তাকের উচ্চতা এবং ভিতরেরর মাপ এক ফুট হলে ভালো হয়। কারণ শেলফে ক্রাউন সাইজ বা ম্যাগাজিন সাইজের বইও রাখতে পারবেন। আবার সাধারণ বুক সাইজের বইও রাখতে পারবেন। এছাড়া শেলফের ভিতর বড় হলে এটাই সুবিধা যে পুরাতন বা ছেঁড়া বইগুলো তাকের পিছন দিকে রাখা যায়। আর নতুন বইগুলো রাখা যায় সামনের দিকে। শেলফে তালা লাগানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে অবশ্যই। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন ঘরোয়া লাইব্রেরিতে আবার তালার কী দরকার। কিন্তু না। তালা লাগবে এজন্য যে বাড়িতে বাইরের লোকও আসে। দুর্লভ, দুপ্রাপ্য বই কিংবা ম্যাগাজিনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ এবং লোভ দুটোই থাকে।
সবকিছুর পর যে জিনিসটি ছাড়া লাইব্রেরির কথা ভাবা যায় না সেটি হলো বই। বই বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা যেতে পারে। প্রথম পদ্ধতি হলো নতুন কিংবা পুরাতন বই কিনে সংগ্রহ করা। দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো আত্বীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে এবং প্রকাশকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বই সংগ্রহ করা। হোক না সে বই নতুন কিংবা পুরাতন।
লাইব্রেরিতে যেভাবে বই সাজাতে হবে
শেলফে বই সাজাতে হবে বিষয়ভিত্তিক। যেমন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, চলচ্চিত্র, চিত্রকলা, জীবনী, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, অভিধান বা পরিভাষা প্রভৃতি। তাকে বিষয়ভিত্তিক বই সাজানোর প্রধান সুবিধা যে বইটি যখন প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে সে বইটি খুঁজে বের করা যায়। এছাড়া বড় সাইজের বইগুলো যদি তাকের যেকোনো এক দিকে বা এক তাকে রাখা যায় তাহলে দেখতে ভালো লাগবে। আর বাকি বইগুলো রাখতে হবে অন্য তাকগুলোতে।
যা যা রাখতে পারেন লাইব্রেরিতে
আপনার লাইব্রেরিতে আপনি বই ছাড়াও রাখতে পারেন পত্রপত্রিকা, পা-ুলিপি, সাময়িকী, জার্নাল, বিভিন্ন রেফারেন্স, তথ্যউপাত্ত প্রভৃতি। এর পাশাপাশি রাখতে পারেন প্রথিতযশা লেখক কবি সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি এবং পোট্রেট।
বইপত্র সংরক্ষণ
লাইব্রেরি শুধু বই দিয়ে সাজিয়ে রাখলেই তো আর চলবে না। লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত উপকরণগুলোও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বই বা পত্রপত্রিকা আলো, বাতাস, তাপ, আর্দ্রতা প্রভৃতি উপাদান দ্বারা অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। বই সহজেই ছত্রাক, ক্ষতিকর পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে বইয়ের মধ্যে কালো দাগ পড়া, বইয়ের পাতা বাদামি হয়ে যাওয়া, ভেজা ভেজা ভাব দেখা দেয়। এজন্য কীটপতঙ্গ বিতাড়ক হিসেবে বইয়ের তাকে তাকে ন্যাপথলিন রাখতে হবে। কিছুদিন অন্তর লাইব্রেরি ভিতর পরীক্ষা এবং পরিষ্কার করতে হবে।
সাবধানতা
ঘরের ভিতর লাইব্রেরি গড়ে তুললে কিছু বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কম জায়গায় যেহেতু বেশি বই রাখতে হয় সেজন্য তাক থেকে বই বের করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাক থেকে জোর করে টেনে বই বের করা যাবে না। এতে বইয়ের মলাট এবং পৃষ্ঠা ছিঁড়ে যেতে পারে। ইঁদুর, তেলাপোকা, উঁইপোকার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করি। কীটনাশক ব্যবহারের সময় খুব সাবধানে ওষুধ ছিটাতে হবে। কারণ অনেকেই আঙুলে মুখের লালা লাগিয়ে বইয়ের পাতা উল্টান। পাতায় কীটনাশক লেগে থাকলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অনেকে শুয়ে শুয়ে বই পড়েন। শুয়ে পড়ার সময় বই ভাঁজ করা যাবে না। কারণ এতে সেলাইয়ের উপর চাপ পড়ে বই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।