পূণ্ড্রবর্ধন সভ্যতার ইতিহাসে অতি প্রাচীন একটি নাম। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পার্শ্বে উচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত আরযা বৃত্তের এই স্থানটির নাম পূণ্ড্রবর্ধন বা শীলাদ্বীপ।
মহাস্থান গড়কে ঘিরে দেখার মত রয়েছে অনেক কিছু । উত্তর-পূর্ব কোণে করতোয়া নদীর কোল ঘেষে গোবিন্দ মুনির ভিটা , জিওৎকুণ্ডু, বৈরাগী ভিটা, শিলাদেবীর ঘাট, ভিমের জাঙ্গাল, গড়ের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দুর্গ, গোকুলের মেড়, খোদা পাথর, মানখালির স্তুপ রাজা পরশুরামের বাড়ি ও এর আশপাশে থাকা বেহুলার বাসর ঘর, যোগীর ভবন , ভাসু বিহার স্তুপ সহ নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থাপনা গুলো দেখার জন্য প্রতিদিন দেশ এবং বিদেশের বহু পর্যটক এসে ভিড় জমায় এখানে।
শিবগঞ্জের মহাস্থান ছাড়াও বগুড়ার শেরপুর ও কাহালু উপজেলাতেও বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। আর এ অঞ্চলের পুরাকৃতিগুলো সংরক্ষণের জন্য মহাস্থান গড়ের উত্তরে রয়েছে সুরক্ষিত একটি জাদুঘর।
বগুড়া প্রত্মতত্ত্ব অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সেক্রেটারী মিঃ কিউ. ইউ. সাহাব ৩ একর জায়গার ওপর মহাস্থান জাদুঘরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর জাদুঘরের মুল প্রতিষ্ঠান ৩ একরের উপরে থাকলেও পরবর্তীতে তা সম্প্রসারিত হয়ে পরিধি দাঁড়ায় প্রায় ১০ একর।
যাদুঘরের কাষ্টডিয়ান নাহিদ সুলতানা সমস্ত মহাস্থান এলাকা পর্যটকদের জন্য একটি অপরিহার্য দদর্শণীয় স্থান উল্লেখ করে জানান, পূণ্ড্র নগরীর আয়তন প্রায় ৫ হাজার বাই সাড়ে ৪ হাজার ফুট। এখানে পুরানো মাটির মুর্তি, বাসনপত্র, স্বর্ণবস্তু, ব্রঞ্চ এর বস্তু, কালো পাথরের মুর্তি, বেলে পাথরের মুর্তি, মাটির খোদায়কৃত ইট, বিভিন্ন শিলালিপি, মাটি, বিভিন্ন ধাতবের বোতাম, কানের ফুল, নাক ফুল, মুল্যবান পাথর, মার্বেল, স্কস্টিক, কাঁচ, ক্যালসেডোনি, ফাইয়েন্স, তামার আংটি, ল্যাটিজ লাজুলি ও ব্রেসলেট সহ বিভিন্ন ধরনের মুল্যবান জিনিস পত্র রয়েছে মহাস্থান জাদুঘরে। এছাড়া খ্রীষ্টপুর্ব ৫ম শতকের পোড়ামাটির দন্ডয়মান মুর্তি থেকে শুরু করে ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম ও ১১শ শতকের কালো পাথরের অম্বিকা এবং লৌহ নির্মিত দ্রব্যাদি সহ বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান ধাতব পদার্থ সংরক্ষিত রয়েছে এখানে।
তিনি আরো জানান, মহাস্থান এসে যাদুঘর পরিদর্শণ করেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। এখানে বাংলাদেশী যে কোন সাধারন জনগনের জন্য জাদুঘর দর্শন ফি ১০ টাকা এবং বিদেশির দর্শনার্থীদের জন্য ১ শ’ টাকা ফি নির্ধারন করা হয়েছে। সপ্তাহের রবিবার ছাড়া অন্য সব দিন খোলা থাকে এই জাদুঘর।
পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আকারের রেস্ট হাউস, রয়েছে ভ্রমন গাইড। আর আবাসন সুবিধার জন্য বগুড়া শহরে গড়ে ফোর স্টার হোটেল নাজ গার্ডেন সহ আন্তর্জাতিক মানের আরামদায়ক আবাসিক হোটেল। যাতায়াতের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন সুবিধা।
পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য রয়েছে সুপ্রশস্থ ও সুন্দর ৪ টি প্রবেশ পথ, এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক ক্রিকট স্টেডিয়াম, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, বিমান বন্দর রাডার ষ্টেশন, কাহালু রেডিও সেন্টার, সারিয়াকান্দী ও ধুনট উপজেলার যমুনা তীরে অবস্থিত পিকনিক স্পট, শহরে অবিস্থত দৃষ্টিনন্দন বহুতল ভবন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক শপিং মল ও সন্ধ্যা বেলার চটপটি এবং চাপ ও কাবাবের মনোরম আসর।
এছাড়া পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বগুড়ায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি উন্নত মানের পার্ক। এসব পার্কের মধ্যে রয়েছে-ঐতিহ্যবাহী বগুড়া এ্যাডওয়ার্ড পার্ক, খোকন পার্ক, নবাববাড়ী প্যালেস মিউজিয়াম, ওয়ান্ডার ল্যান্ড, শাহনেওয়াজ শিশু বাগান, শেরপুরের সাউদিয়া সিটি পার্ক সহ শহরের উপশর এলাকায় রয়েছে ঘুড়ে বেড়ানোর মতো বেশ কিছু খোলা যায়গা।
তাছাড়া হোটেল আকবরিয়া, এশিয়া ও কোয়ালিটির ৫০ রকমের সুস্বাদু মিষ্টি ও চিকন সেমাই এর স্বাদ নিতে নিতে হলেও আসতে হবে বগুড়ায়।
বসবাসরত শহর কেন্দ্রীক নাগরিকরা চিত্ত্ব বিনোদনের প্রতিদিন বিকালে এসব পার্কে ঘুড়ে বেড়িয়ে তাদের সময় কাটান। তাছাড়া দুর দুরান্ত থেকে আগত ভ্রমন পিয়াসীরা বগুড়ায় এসব স্থাপনায় এসে ঘুরে যান প্রায় প্রতিদিনই। উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অনুকুল পরিবেশ কারনে উত্তর বঙ্গের প্রানকেন্দ্র বগুড়া জেলা সবশ্রেনীর মানুষের কাছে একটি ভ্রমনপ্রিয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সময় করে না হয় আপনিও সবান্ধব চলে আসুন।