ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

দীর্ঘ সময় বসে কাজের ঝুঁকি

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৭
দীর্ঘ সময় বসে কাজের ঝুঁকি ছবি: দীর্ঘ সময় বসে কাজের ঝুঁকি

জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের অফিস বা ব্যবসা ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকতে হয়। এই চেয়ারে বসে থাকার ফলে আমাদের ভুগতে হয় নানা সমস্যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলো কোমর ও ঘাড়ে ব্যথা।

ডেস্ক জব করেন, কিন্তু কোমর বা ঘাড়ে ব্যথা হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অনেকের জন্য এটা একটা অভিশাপের মতো দেখা দেয়, কারণ এই সমস্যার জন্য অনেকে পেশা পরিবর্তন করতেও বাধ্য হন।

আজ আমরা আলোচনা করব, এই ধরনের বসে থাকার জন্য যে কোমর বা ঘাড়ে ব্যথা হয়, তার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে।

স্বাভাবিক ভাবেই চেয়ারে বসার সময় আমরা কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে বসি। আমাদের কোমরের যে মেরুদণ্ড আছে, তা কিন্তু সরল রেখার মতো সমান বা সোজা নয়। মেরুদণ্ড অনেকগুলো ছোট হাড়ের সমন্বয়ে তৈরি। এই হাড়গুলোর মাঝখানে আবার রয়েছে নরম জেলির মতো ডিস্ক যা হাড়ের মধ্যে ঝাঁকুনি প্রতিহত করে ও পুরো মেরুদণ্ডকে ফ্লেক্সিবল করে।

আমরা যখন দীর্ঘক্ষণ সামনের দিকে ঝুঁকে বসে থাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডের এই ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সাথে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের আসেপাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। ডিস্কগুলো যেহেতু নরম, তারা এই অস্বাভাবিক চাপের দরুন আস্তে আস্তে স্ফিত হয়ে মেরুদণ্ডের ভেতর থেকে শরীরের বিভিন্ন নার্ভের ওপর চাপ দেয়। আর এজন্য আমরা ব্যথা অনুভব করি। এই চাপের তারতম্য বা তীব্রতার ওপর ব্যথার ধরণ নির্ভর করে। চাপ যত বেশি হবে, ব্যথার তীব্রতাও বেশি হবে, সেই সাথে কোমর থেকে ব্যথা ছড়িয়ে পড়বে। অনেক সময় এই ব্যথা পায়েও অনুভূত হতে পারে।

উন্নত দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের এ ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ অ্যাডজাস্টেবল চেয়ারের ব্যবস্থা করে থাকে, যা মেরুদণ্ডের আকৃতি ঠিক রেখে বসতে সাহায্য করে। তবে বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠানে এখনো এ চেয়ার ব্যবহার করা হয় না।

আশার কথা হচ্ছে, সাধারণ চেয়ারে কিছু বিশেষ ধরনের কুশন ব্যবহার করে মেরুদণ্ডকে সোজা রেখে কোমর ও ঘাড় ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

যারা কোমর অথবা ঘাড়ে ব্যথায় ভুগছেন, তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, কোনোভাবেই সামনে ঝুঁকে বসা যাবে না। কাজের চাপে আমাদের মনে থাকে না সোজা হয়ে বসার কথা। এজন্য আমরা একটি বিশেষ কুশন চেয়ারের সাথে ব্যবহার করতে পারি। এগুলোকে বলা হয় লাম্বার রোল। এই লাম্বার রোল ব্যবহার করলে আমাদের কোমর সোজা থাকবে।

২-৩ ঘণ্টা বসে কাজ করার পর ১০-১৫ মিনিটের জন্য হালকা হাঁটা চলা করে নিন। ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই আপনাকে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ (সাধারণ এক্সারসাইজ নয়) দেবেন, যাতে আপনার মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলো আগের জায়গায় ফিরে আসে।

শেষ কথা হচ্ছে, বেশিদিন কর্মক্ষম থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই সামনে ঝুঁকে বসে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সব সময় কোমরের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় রেখে বসতে হবে। প্রয়োজনে লাম্বার রোল ব্যবহার করতে হবে যাতে ব্যথার উৎপত্তিই না হয়।

বন্ধুরা এটা পড়ার পরেও কি এখনো আমরা ডেস্কে সামনের দিকে ঝুঁকে বসে আছি? 

ডাঃ ওসমান গনি
নিউরো রিহ্যাব ও পেইন স্পেশালিষ্ট ফিজিওথেরাপিস্ট


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।