ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

শিশু থাকুক যতনে

ওবায়দুল্লাহ্ সনি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১১
শিশু থাকুক যতনে

জন্মের পর থেকে নবজাতক কিংবা শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে নানা রোগব্যাধি ভিড় জমায় শিশুর চারপাশে।

এসব নিয়ে বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হয় শিশুর মা-বাবাকে। কিন্তু আপনি যদি একটু সচেতন থেকে কিছু বিষয় মনে রাখুন, তাহলে আর বাড়তি ঝামেলা নেই। দুশ্চিন্তা মুক্তভাবে বেড়ে উঠবে আপনার শিশু।

কোলে নেওয়া
ছোট্ট শিশুকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় সর্বদা এক হাত মাথার নিচে রেখে সাপোর্ট দিতে হবে। কখনো মাথায় বা এক হাতে ধরে ঝুলিয়ে যেন তুলে না নেওয়া হয়। মা যেভাবে বাচ্চাকে সঠিক পদ্ধতিতে স্তন্যপান করান, সেভাবে উষ্ণ আলিঙ্গনে রেখে বাচ্চাকে কোলে রাখতে হয় এবং বাহু শিশুর মাথা ঘাড়ের পাশে থাকবে, অন্য বাহু ও হাতে শিশু-শরীরের বাকি অংশে সাপোর্ট দেবেন।

শিশুকে শোয়ানো
বেশি তুলতুলে নরম বিছানায় নবজাতক শিশুকে শোয়ানো উচিত নয়। এতে করে সে উল্টে গিয়ে তার নাক-মুখ চেপে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছুটা শক্ত বিছানা ও দুই পাশে ছোট বালিশ ব্যবহার করুন। তবে খেয়াল রাখুন যেন প্রস্রাবের পর সে যেন তার উপরে বেশিক্ষণ শুয়ে না থাকে। এতে করে তার ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

জাগানো
এমনিতেই শিশুরা বেশি ঘুমাতে চায় না। তাই ঘুমের পর যদি শিশুকে জাগাতেই হয়, তবে তীব্র কোনও বাজনা বাজানো বা শব্দ সৃষ্টি না করাই ভালো। তাকে আলতোভাবে চুম্বন-স্পর্শ করুন অথবা আলতোভাবে গায়ে সুড়সুড়ি দিন। তাতেই দেখবেন ও মিষ্টি করে হেসে জেগে উঠবে। মনে রাখবেন পিঠে বা শরীরের অন্য অংশে শিশুকে থাপড় বা ঝাঁকুনি দেওয়া উচিত নয়।

শিশুর সঙ্গে খেলা
খেলাধুলা আপনার শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে অত্যান্ত সহায়ক। তাই ছোট্ট শিশুকে নিয়ে খেলা করুন। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, খেলার সময় ওকে এমনভাবে দুই হাতে ধরতে হবে, যেন ছিটকে না পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় শিশুকে হাসানোর জন্য হাত থেকে শূন্যে ছেড়ে খেলা করা হয়। যা অত্যান্ত খারাপ। এতে করে শিশুর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুরা সাধারণত কোনও কিছু হাতের কাছে পেলেই তা মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাই আপনার বাবুর খেলনাগুলোকে অবশ্যই পরিষ্কার করে তার হাতের কাছে দিন।

শিশুকে শান্ত করানো
সাধারণত শিশুদের জিদটা একটু বেশি। তাদের অপছন্দের কোনও কিছু করলেই তারা চিৎকার চেচামেচি করে। আর তাই শিশুকে শান্ত করার সময় এমন কিছু করা উচিত না যা তার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন ধরুন শিশুকে শান্ত করতে আমরা হাতের কাছে যা পাই তাই দিয়ে তাদের বশ করতে চাই। যা একেবারেই অনুচিৎ। কারণ এগুলোর মধ্যে বেশকিছু বিপজ্জনক দ্রব্যও থাকতে পারে। বরং শিশুকে শান্ত করতে মায়া-মমতায় আলত পরশে পিঠে হাত বুলিয়ে দিন। তাকে কাঁধেও নিতে পারেন। তবে অবশ্যই সাবধানে। দেখবেন শিশুর কান্না থেমে যাবে।

হাসাতে
সুন্দর মনের জন্য হাসি অত্যান্ত সহায়ক। হওক সে শিশু, যুবক কিংবা বৃদ্ধ। তাই আপনার শিশুর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য শিশুর ভালো লাগে এমন কিছু করতে পারেন। আপনার শিশুর বয়স অনুযায়ী রংবে-রঙের পুতুল ও খেলনা নিয়ে তার সঙ্গে মজা করতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় শিশুকে হাসানোর জন্য তার মুখে আঙুল দিয়ে নাড়ানাড়ি কিংবা মাথার উপর তুলে দোলানো হয়, যা কখনো উচিত নয়। এতে করে শিশুর পেট খারাপ ও বোমি করে দিতে পারে।

নাক পরিষ্কার রাখতে
শিশুদের নাকে প্রচুর ময়লা জমে। তাই নাক সবসময় পুরষ্কার রাখা উচিত। নবজাতকের নাক পরিষ্কার করতে কয়েক ফোঁটা লবণমিশ্রিত পানি শিশুর নাসারন্ধ্রে দিয়ে নরম পরিচ্ছন্ন কাপড় সুচোমুখ করে পরিষ্কার করা যায়। প্রয়োজনে ন্যাজেল অ্যাসপিরেটরের সাহায্য নিতে পারেন। অনেক সময় নবজাতকের নাক পরিষ্কার করতে অনেকেই নিজের অপরিচ্ছন্ন আঙুলের ডগা শিশুর নাসারন্ধ্রে ঢুকিয়ে চেষ্টা চালাতে থাকেন। যা একেবারেই উচিত নয়।  

বুকের দুধ পান
মায়ের বুকের দুধ শিশুর প্রধান খাবার। তবে শিশুকে বুকের দুধ পানের সঠিক অবস্থান জেনে নিতে হবে। মা পিঠ সোজা রেখে বসবেন। শিশুর পেট মায়ের পেটের সঙ্গে লেগে যাবে। শিশু বড় হাঁ করে স্তনের বোঁটা মুখে নিবে। কিন্তু অনেকেই সিগারেট ধরার ভঙ্গিতে স্তনের বোঁটা শিশুর মুখে গুঁজে দেয়। যা অত্যান্ত ভুল। মায়ের স্তন সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

খাবার খাওয়ানো
শিশুকে বাইরের ও বাসি খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। ঘরে তৈরি হালকা ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে। তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। অনেক শিশুর পুষ্টিকর খাবার ও শাকসবজির প্রতি অনীহা থাকে। জোর না করে কৌশলে ওদের এসব খাবার খাওয়ান। খাবার খাওয়ানোর সময় তাদের সঙ্গে গল্প করুন। বোতলজাত ফলের রস, কোমল পানীয় না কিনে বরং বাসায় ফল থেকে রস তৈরি করে শিশুকে খাওয়ান। বেশি করে পানি বা পানীয় জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। তবে কোনোভাবেই যেন ঠাণ্ডা না লেগে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঠাণ্ডায় শিশুর মাথাব্যথা বা সাইনোসাইটিসের সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যা শিশুর ভবিষ্যতকে করে তুলতে পারে অতিষ্ঠ।

শিশুর পোশাক
শিশুদের জন্য পোশাক নির্বাচন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ অনেক পোষাক শিশুর জন্য আরামদায়ক নাও হতে পারে। শিশুদের অবশ্যই সুতি কাপড়ের পোশাক পরাতে হবে। নরম, পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাকটি একটু ঢিলেঢালা হলে ভালো হয়। কেননা, শিশুরা ঘামে বেশি। ঢিলেঢালা পোশাকে বাতাস ঢুকতে পারে। এতে সহজেই ঘাম শুকিয়ে যায়। এ সময় পোশাকের রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও হতে হবে সচেতন। সাদা, হালকা গোলাপি, হালকা হলুদ, বেগুনি, সবুজ, গাঢ় নীল, লেবু রঙের পোশাকই বেশি স্বস্তিদায়ক।

শিশুর চুল
গরমে শিশুর চুল ছোট রাখাই ভালো। এতে ঘামে ঠা-া লাগার ভয় থাকবে না। আর ঘাম হলে সঙ্গে সঙ্গে চুলটা মুছে দিতে হবে, যাতে করে ঠাণ্ডা লেগে না যায়। যেসব মেয়েশিশুর চুল বড়, তাদের বেণি করে দিতে হবে। চাইলে সামনের দিকে ব্যাঙস কেটে দিতে পারেন। ঝুঁটি বেঁধেও রাখতে পারেন। ছেলেশিশুদের জন্য ক্রুকাট, বাজকাট, স্পাইক কাট মানানসই। মেয়েশিশুরা ববকাট কাটতে পারে গরমে। শিশুর চুল সপ্তাহে দু’বার শ্যাম্পু করে ধুয়ে দিন। এরপর শুকনো করে মুছে আঁচড়িয়ে দিন।

এছাড়াও

  • শিশুকে সরাসরি ফ্যানের বাতাসের নিচে রাখবেন না। এতে ঠা-া লেগে যাবে।
  • শিশুকে কখনোই খালি গায়ে শোয়াবেন না। পাতলা পোশাক পরিয়ে ঘুম পাড়ানো উচিত।
  • শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র চালালেও তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা উচিত। প্রয়োজনে পাতলা কাঁথা বা চাদর গায়ে দিয়ে দেবেন।
  • খুব গরমে আইসক্রিম খেতে চাইলে তা এড়িয়ে যান। ওর পছন্দের অন্য কোনও জিনিস কিনে দিতে পারেন।
  • কিছুক্ষণ পরপর শরীর মুছে দিন, যাতে ঘামে ঠা-া না লাগে। পোশাকও ঘেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে দেবেন।
  • রাতে ঘুম পাড়ানোর আগে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে পাউডার লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে সে আরামে ঘুমাতে পারবে।
  • শিশুর পোশাকটি যেন ভালোভাবে শুকানো হয়। সামান্য ভেজা থাকলেও পরাবেন না। প্রয়োজনে ইস্তিরি করে নিতে পারেন।
  • গরমে প্রতিদিন গোসল করাতে ভুলবেন না। সামান্য কাশি হলেও করাবেন। সম্ভব হলে আদাপানি, তুলসীপানি খাওয়াতে পারেন।
  • গোসলের পর অবশ্যই চুলটা ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। ঘেমে গেলেও ভালোভাবে চুলটা শুকনো করে মুছে দিন।
  • ময়লা, ধুলাবালুময় জায়গায় শিশু যেন না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।


পরম আদরে আর যত্নে বেড়ে উঠুক আপনার সোনামনি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।