শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের কথা বললে এখন প্রথমেই যে জিনিসটি চোখে ভাসে, তা হলো টি-শার্ট। আজিজ সুপার মার্কেট এবং টি-শার্ট যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে টি-শার্টের এই নতুন অধ্যায় যার হাত ধরে শুরু হয়, তিনি হলেন বাহার রহমান। তার প্রতিষ্ঠিত নিত্য উপহার দেশীয় টি-শার্টকে জনপ্রিয় করতে রেখেছে অনন্য অবদান। নিত্য উপহারের টি-শার্ট আজ পৌঁছে গেছে সুউচ্চ এভারেস্ট চূড়ায়। বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মূসা ইব্রাহীম যখন এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছেন তখন তার গায়ে ছিল নিত্য উপহারের টি-শার্ট। এর আগেও মূসা অন্নপূর্ণাসহ বিভিন্ন অভিযানে গিয়েছেন নিত্য উপহারের টি-শার্ট ও ব্যান্ডেনি পরে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল নিত্য উপহারের টি-শার্ট ও ব্যান্ডেনা পরে প্র্যাকটিস করেছেন নানা দেশে, নানা সময়ে।
২০০০ টাকায় শুরু
শুরুটা ছিল ১৯৯২ সালের জুন মাসে। তখনও আজিজ মার্কেটে যাত্রা শুরু করেননি। সম্বল ছিল মাত্র ২০০০ টাকা। অল্প পুঁজি দিয়ে বড় স্বপ্ন এবং সাফল্যের মূল কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অল্প Resource, Best effort.’ সেই অল্প টাকা দিয়েই তিনি একটি ছোট ডিরেক্টরি প্রকাশের উদ্যোগ নেন, যেখানে প্রাচীন আমল থেকে সমসাময়িক কবিদের লেখা ছোট ছোট কবিতার পঙ্ক্তি ছিল, আরও ছিল নানা ধরনের তথ্য এবং জরুরি ফোন নম্বর।
এরপর শুরু করেন ভিজিটিং কার্ড এবং ছোট ছোট প্যাডের কাজ। এছাড়া বিয়ের কার্ড এবং বিভিন্ন দাওয়াতের কার্ডও করেছেন তিনি। ‘বিয়ের কার্ড করার সময় আমরা বিয়ের তারিখসহ নাম-ঠিকানা লিখে রাখতাম এবং পরবর্তী সময়ে তাদের বিবাহবার্ষিকীতে আমরা শুভেচ্ছা কার্ড পাঠাতাম। লোকজন খুব অবাক হতেন এবং ব্যাপারটা পছন্দ করতেন। ’ বলেন বাহার রহমান।
টি-শার্টের যাত্রা
আজিজ সুপার মার্কেটে আসেন ১৯৯৪ সালে। তিন তলায় সামনের দিকে একটা রুম ভাড়া নেন। কাজের ফাঁকে প্রতিদিন চলত আড্ডা। আড্ডায় তার সঙ্গী ছিলেন, ধ্রুব এষ, সব্যসাচী হাজরাসহ দেশের খ্যাতিমান অনেক শিল্পী। ‘তখনই ভালো কিছু এবং বড় কিছু করার চিন্তা থেকে টি-শার্টের আইডিয়াটা আসে মাথায়। ’
২০০১ সালে প্রথম শুরু করেন টি-শার্ট। কিন্তু বাজারে প্রচলিত ডিজাইনের মতো ডিজাইন ছিল না। ডিজাইনের বেসটা ছিল বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাহার রহমান বলেন, ‘নতুন কিছু, নিজের কিছু, মনের মতো কিছু করার চেষ্টা করেছি। যেন টি-শার্টের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে তরুণরা ধারণ করেন। ’
দেশের প্রখ্যাত ডিজাইনার ও শিল্পী ধ্রুব এষ, সব্যসাচী হাজরা, কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, আনিসুজ্জামান সোহেলসহ অনেকেই হয়েছেন নিত্য উপহারের পথ চলার সঙ্গী। দেশীয় সংস্কৃতিকে তারা তুলে এনেছেন টি-শার্টের ডিজাইনে। তাই অনেক ফ্যাশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন ফ্যাশনের ওপর ইন্টার্নশিপ করতে।
২০০৬ সাল থেকে আরও যোগ হয় শাড়ি। ঋতু এবং উৎসব অনুযায়ী নিত্য উপহারের টি-শার্ট কিংবা শাড়িতে থাকে ভিন্নতা। বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস, বাবা দিবস, মা দিবস, ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবস, যেমন- স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারিতেও থাকে রঙ এবং ডিজাইনের ভিন্নতা। এছাড়া ঈদ আর পালাপার্বণ তো আছেই।
দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে
‘২০০৫ সালে টম বরিস নামে স্লোভাকিয়া থেকে তরুণ আসেন বাংলাদেশে। ঢাকার রাস্তায় একদিন এক ছেলের গায়ে টি-শার্ট দেখে জানতে চান, কোথা থেকে কিনেছো। সেটা ছিল নিত্য উপহারের টি-শার্ট। টম বরিস আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং আমাদের টি-শার্ট কিনতে আগ্রহী হয়। এমন আরও অনেক ঘটনা। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে নিত্য উপহারের টি-শার্ট আজ পৌঁছে গেছে এবং জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। ’ বাহার রহমান বলতে থাকেন তার কথা।
এবারের ঈদ ভাবনা
বাহার রহমান জানান, ‘আগে ঈদের চেয়ে অন্যান্য দিবসের ওপরই বেশি গুরুত্ব দিতাম। কিন্তু এখন ঈদটাকেও অনেক বেশি ভাবতে হয়, চাহিদা এবং জনপ্রিয়তার কারণে। ’ তিনি আরো জানান, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টি-শার্টের যে সিরিজটা ছিল, তার নাম সিরিজ অব হেরিটেজ অ্যান্ড এপিসোড। এই সিরিজে প্রাধান্য ছিল দেশের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতির। এখন নতুন একটা সিরিজ শুরু হতে যাচ্ছে, যার নাম সিরিজ অব রিয়াল লাইফ স্টোরি। এতে প্রাধান্য পাবে দৈনন্দিন জীবন এবং ব্যক্তিমানুষের সাফল্যগাথা। যেমন এই থিমটিতে তুলে ধরা ধরা হবে মুসা ইব্রাহিমের এভারেস্ট জয়ের অর্জনটাকে। বাচ্চাদের জন্যও আছে নীল কমল, লাল কমল সিরিজ।
এই ঈদকে সামনে রেখেই ২৫ আগস্ট থেকে বসুন্ধরা সিটিতে শুরু হতে যাচ্ছে নিত্য উপহারের নতুন শো-রুম। আজিজ সুপার মার্কেটে টি-শার্ট, শাড়ি কিংবা ফতুয়ার শোরুমগুলো ভিন্ন হলেও এখানে সব পাওয়া যাবে একই সাথে।
বাংলাদেশ স্থানীয় ১২৫৮, আগস্টর ২৩, ২০১০