নিজের মতো করে কিছু শুরু করার, নিজের একটি নতুন উদ্যোগ তৈরি করার মানসিকতা এ প্রজন্মের মধ্যে বেশ দেখা যাচ্ছে। তবে একটি নতুন উদ্যোগ এখনো সবাই সহজভাবে গ্রহণ করতে চায় না।
যেকোনো উদ্যোগ শুরুর আগে যে বিষয়গুলোতে ফোকাস করলে একজন নতুন উদ্যোক্তা সফলতার সঙ্গে টিকে থাকতে পারবেন। জেনে নিন-
উদ্যোক্তার মতো চিন্তা করার ক্ষমতা
সম্পূর্ণ নিজের মতো করে নতুন কোনো উদ্ভাবন করা বা উদ্যোগ গ্রহণকারীকে বলা হয় উদ্যোক্তা। নতুন উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে একজন ব্যক্তিকে উদ্যোক্তার মতো চিন্তা করতে হবে। অর্থাৎ তার মধ্যে নতুন কিছু তৈরি করার সাহস, ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা, সবরকম চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মনোভাব থাকতে হবে। নিজের উদ্যোগের সফলতা বা ব্যর্থতা সবরকম দায়ভার নিজের এধরনের মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে।
পরিকল্পনামতো কাজ করা
যেকোন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনাহীন যেকোনো উদ্যোগে খুব দ্রুত বিপর্যয় নেমে আসে। তাই নতুন উদ্যোগ শুরু করার পূর্বে সময় নিয়ে চিন্তা করে পরিকল্পনা মাফিক একটি ছক সাজাতে হবে এবং সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে।
সঠিক বিনিয়োগের ছক
নতুন উদ্যোক্তাদের পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেকোনো বিনিয়োগের পূর্বে বিনিয়োগের একটি ছক সাজাতে হবে এবং আয় ব্যয়, লাভ লোকসানের হিসাব নিকাশ সুষ্ঠুভাবে কষতে হবে।
মৌলিক ব্যবসায়ীক ধারণা
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা সংক্রান্ত মৌলিক ধারণা থাকা আবশ্যক। ব্যবসা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ও পর্যাপ্ত জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে নতুন উদ্যোগটি কতটা গ্রহণযোগ্য এবং গৃহীত পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে।
সঠিক পণ্য নির্বাচন
যেকোনো উদ্যোগের অন্যতম মূল উপাদান হলো পণ্য। তবে পণ্যটি যদি উদ্যোগটির জন্য সঠিক না হয় তাহলে উদ্যোগটি ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই একজন নতুন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই সঠিক পণ্য বাছাই করতে হবে। সঠিক পণ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা যেতে পারে -
• যে পণ্যের প্রতি নিজের আগ্রহ এবং ধারণা আছে সে পণ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে
• কোনো একটি পণ্য নিয়ে অপরজন কাজ করে লাভবান হচ্ছে তাই আমিও সেই পণ্য নিয়েই কাজ করবো এধরনের মানসিকতা বর্জন করতে হবে
• পণ্য বাছাইয়ের পূর্বে সেই পণ্যের সোর্সিং করা সুবিধাজনক কিনা এবং যে পণ্যটির সাপ্লাই চেইন নির্ভরযোগ্য কিনা তা যাচাই করতে হবে
• পণ্যটি মানসম্পন্ন কিনা এবং তার চাহিদা কেমন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
টার্গেট কাস্টমার নির্ধারণ, বাজার বিশ্লেষণ ও সঠিক দাম নির্ধারণ
যেকোনো নতুন উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে পণ্যটির জন্য সঠিক টার্গেট কাস্টমার বাছাই করতে হবে। টার্গেট কাস্টমার বাছাইয়ের পাশাপাশি সেই পণ্যটির বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে এবং পণ্যটির পেছনে উদ্যোক্তার সার্বিক খরচ ও লাভের একটি নির্দিষ্ট শতকরা হার সংযুক্ত করে পণ্যটির দাম নির্ধারণ করতে হবে।
পণ্যের ডেলিভারি, পরিবহন ব্যবস্থা ও প্যাকেজিং
নতুন উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে সঠিকভাবে পণ্য ডেলিভারি ও পরিবহণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য অনুযায়ী সঠিক প্যাকেজিং বেছে নিতে হবে যেনো পণ্যটি গ্রাহকের কাছে অক্ষত অবস্থায় পৌঁছে।
যোগাযোগ দক্ষতা
নতুন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে। তার পণ্য ও সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে হলে এবং গ্রাহকের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে চাইলে গ্রাহকের সঙ্গে ধৈর্য ধরে ও মার্জিতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। গ্রাহকের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
কাস্টমারকে প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা
নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে কাস্টমারকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কাস্টমার তার উদ্যোগের আসল চালক এই মর্মে বিশ্বাসী হতে হবে এবং সব ধরনের কাস্টমারের সঙ্গে ডিল করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
টেকনিক্যাল স্কিল
একজন নতুন উদ্যোক্তার অবশ্যই মৌলিক টেকনিক্যাল স্কিলগুলোতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি পরিবর্তনশীল টেকনলজি সম্পর্কে সবসময় অবহিত থাকতে হবে। নিজের পণ্য সম্পর্কে নিয়মিত লেখাপড়া করা ও নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহ করার চর্চা থাকতে হবে।
এছাড়াও একজন নতুন উদ্যোক্তার কমপক্ষে একবছর সময় দিয়ে তার উদ্যোগটিকে দাড়ঁ করানোর জন্য সময় ও শ্রম দিয়ে টিকে থাকতে হবে। সাময়িক কিছু লস হলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দীর্ঘমেয়াদী লাভের চিন্তা করে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখা: রাকিমুন জয়া
ফাউন্ডার পরিধান শৈলি
বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
এসআইএস