আমাদের ভাষার মুক্তির মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষা জয়ের মাধ্যমেই আমাদের ভেতর আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়, আমরাই পারবো দেশকেও মুক্ত করতে।
আমাদের মাতৃভাষা উদযাপন হয় বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এই সম্মান বড় আনন্দের-বড় গর্বের। আরেক ভাবে ভাবলে ভাষার জন্যই আজ বড় দুঃখবোধ হয়। কারণ আমাদের বাংলাভাষা সুন্দর ও সমৃদ্ধ। অথচ আমরা অনেকেই শুধু বাংলায় মনের পুরোভাবটাই প্রকাশ করতে পারি না। আমাদের আশ্রয় খুঁজতে হয় অন্য দেশের ভাষার ওপর।
একটা পুরো বাক্য বলতে আমরা অনেকেই ছয় শব্দের ভেতরে দু’টি ভিনদেশি শব্দের সাহায্য নেই। অথচ কথা বলার সময় ইংরেজি বা হিন্দি যে শব্দগুলো আমরা ব্যবহার করছি সেগুলোর সুন্দর সুন্দর বাংলা শব্দ রয়েছে। আর আমরা সেগুলো জানিও।
একটা বিষয় ভেবে দেখুন তো আমাদের ভাষাটার সম্মান পৃথিবীর সব দেশের কাছে রয়েছে, তারপরও তারা যখন কথা বলে, তারা কি একটাও বাংলা শব্দের ব্যবহার করে? তবে আমরা কেন করবো?
আবার আমরা অনেকেই শুধু ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাংলা ভাষা চর্চার বিষয়ে কথা বলি। অনেকে চেষ্টাও করি, সব কথা বাংলায় বলার। বাস্তবতার কারণেই আমাদের সব কাজ শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় করা সম্ভব নাও হতে পারে। বাংলার বাইরে অন্য ভাষায় কথা বলা যাবে না, এটা কিন্তু বলছি না মোটেই।
তবে ভাষার আয়ত্ব এতটুকু করতে হবে যেন কথা বলতে নিজের ভাষার সঙ্গে অন্যের ভাষার সাহায্য না নিতে হয়। আবার যখন আমরা ইংরেজি বা অন্য ভাষায় কথা বলবো, তখনও যেন কথার মাঝে বাংলা ভাষার ব্যবহার না হয়।
নিজে চর্চা করি বাংলা ভাষায় সঠিক উচ্চারণ ও শব্দের ব্যবহার করে গুছিয়ে কথা বলতে, আর ছোট বেলা থেকেই সন্তানদেরও শেখাই। দেশের প্রতি ভালোবাসা আর ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিয়ে যেন তারা বেড়ে ওঠে।
একবার ভাবুন তো, বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ যে এত গল্প, কবিতা-গান লিখে গেছেন, তিনি কি একটি গানেও বাংলার সঙ্গে কোনো ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছেন? অথবা সনেটের রচয়িতা মাইকেল মধু সূদন দত্তের লেখাগুলো পড়ুন, বাংলা ভাষার কি অপূর্ব ব্যবহার তিনি করে গেছেন। আর আমরা খুব সাধারণ কথাগুলোও গুছিয়ে বলতে শিখবো না, তাই কি হয়!
সব শেষে কবির ভাষায় বলতে হয়, নানান দেশের নানান ভাষা/ বিনে স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২১
এসআইএস