আবারো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মহামারি করোনা। এই ভাইরাসটি বায়ুবাহিত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিদিনই যখন বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু, সেই অবস্থায়ও আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর সোশাল অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল হেলথ সায়েন্টিস্ট, শামীম আহমেদ।
শামীম আহমেদ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং ভারতের কিছু মিডিয়ায় ল্যান্সেটে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে যেসব রিপোর্ট হচ্ছে তা জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এই বিষয়ে একজন জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক হিসেবে মানুষকে কিছু কথা বলা জরুরি বলে মনে করছি।
তিনি বলেন, আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের উচিত আগে বিষয়টি সম্পর্কে জানা ও সচেতন হওয়া।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, গবেষকরা বলছেন, এমন কিছু পরিবেশ আছে যেখানে হাঁচি, কাশির জলকণার মাধ্যমে কোনোভাবেই একজন থেকে আরেকজনের কাছে করোনাভাইরাস পৌঁছানোর কথা নয়, সেখানেও একজন থেকে আরেকজন সংক্রমিত হয়েছে, এমন প্রমাণ মিলেছে। উদাহরণ হিসেবে তারা প্রমোদতরী, কসাইখানা, বৃদ্ধাশ্রম, সংশোধনাগার বা জেলখানার উদাহরণ দিয়েছেন।
আর এর থেকেই ধারণা করছেন শুধুমাত্র বাতাসে প্রবাহিত হয়েই পুরো জায়গায় করোনা ছড়িয়েছে।
তারা বলছেন, পৃথিবীতে সর্বমোট আক্রান্ত করোনা রোগীদের প্রায় ৫৯ শতাংশই উপসর্গবিহীন ছিলেন। অর্থাৎ তারা হাঁচি কাশি দিয়েছেন বা হাঁচি কাশি থেকে আক্রান্ত হয়েছেন এমন প্রমাণ নেই। তাহলে কীভাবে এত মানুষের মধ্যে করোনা ছড়ালো? তাদের সন্দেহের চোখ সেই বাতাসের দিকেই।
ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় বাতাসে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত করোনাভাইরাস থাকতে দেখা গেছে। করোনা রোগীর গাড়ির বাতাসেও এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। অর্থাৎ হাসপাতাল কক্ষ বা গাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাবার পরও ৩ ঘণ্টা এই ভাইরাস বাতাসে থাকতে পারে যা প্রমাণ করে বায়ুবাহিত হয়ে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে।
এ পর্যন্ত এমন কোনো গবেষণা পাওয়া যায়নি যেটি সুনির্দিষ্ট করে বলতে পেরেছে যে করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না। এমন কী করোনাভাইরাস হাঁচি-কাশির জলকণার মাধ্যমে ছড়ায় এমন কোনো শক্তিশালী তথ্যপ্রমাণও কোনো গবেষণায় পাওয়া যায়নি।
এবার আসি কেন গবেষণাটি নিয়ে আমাদের আরও জানতে হবে, কারণ, ল্যান্সেটে প্রকাশিত গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সম্পূর্ণ মৌলিক নয়। এই গবেষণার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে নতুন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়নি। মূলত এর আগেই প্রকাশিত নানা গবেষণাপত্রে প্রাপ্ত তথ্যাদি থেকে একটি উপসংহার টানা হয়েছে।
এই গবেষণাটি যে পদ্ধতিতে করা হয়েছে, এবং যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেটি একটি ধারণার বৈজ্ঞানিক বহিঃপ্রকাশ মাত্র, এখানে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে এমনটি বলা যায় না।
তারপরও মহামারির এই সময়ে নিজেদের নিরাপদে রাখতে কিছু বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:
• অন্যের শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে দূরে থাকতে হবে
• মানুষের আনাগোনা আছে এমন স্থানে উন্নতমানের মাস্ক পরুন
• নিজে হাঁচি কাশি দিলে অবশ্যই অন্যের থেকে দূরে থাকতে হবে
• আর অন্য কেউ হাঁচি কাশি দিলে তার সঙ্গেও দূরত্ব বাড়াতে হবে
• ঘরে থাকলে দরজা জানালা খোলা রাখতে হবে
• সুযোগ পেলেই ভ্যাক্সিন নিয়ে নেওয়াও জরুরি
• যতদূর সম্ভব পরিবারের সদস্য নয়, এমন মানুষের সঙ্গে শারীরিক দেখা-সাক্ষাত এড়িয়ে চলা
• মানসিক চাপমুক্ত থেকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা
• মনে রাখতে হবে হাঁচি কাশি থেকে সতর্ক থাকলেই শুধু হবে না, বরঞ্চ শুধুমাত্র দু’জন মানুষের কথা বলার সময়ে বাতাসে ছড়ানো ভাইরাসই কোভিড-১৯ সংক্রমণের জন্য যথেষ্ট।
সবশেষে শামীম আহমেদ বলেন, আমাদের সব কিছু আমূল পালটে ফেলতে হবে এমন নয়। আপনার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করুন, সুস্থ থাকুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২১
এসআইএস