ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ফিগার সচেতনতার নামে অন্যকে হেয় করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে 

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২১
ফিগার সচেতনতার নামে অন্যকে হেয় করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে 

বডি শেমিং থেকে মুক্ত নয় ছোট শিশুরাও। একটু স্বাস্থ্য ভালো বাচ্চার স্কুলের বন্ধু থেকে প্রতিবেশী অনেকেই বলতে শুরু করেন, ওজন কমাও বা এতো মোটা কেন? মাকেও শুনতে হয় নানা কথা, খেয়াল রাখে না কেন শিশুর? আর বড়দের তো সব কিছুতেই বডি শেমিং করতে বসে থাকে একদল লোক।

লম্বা কেন? ছোট কেন? মোটা কেন? ডাবল চিন কেন? মুখে এতো ব্রণ কেন? সাদা কেন? কালো কেন?  

এতো কেন-র উত্তর দিতে দিতে সত্যি ক্লান্ত অনেকেই। বডি শেমিং করে অনেকেই চান প্রিয়জনের জীবনে ভালো পরিবর্তন আনতে। কিন্তু মানুষকে অপমান করে কি শোধরানো সম্ভব? এসব করে তার তো লাভ খুব একটা হয় না। বরং বডি শেমিং-এর শিকার হয়ে তিনি অনেক সময় জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। যার পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ। বন্ধু-আত্মীয় বা কলিগ যেই এভাবে হেয় করে কথা বলবেন, ভুক্তভোগীর কাছে তিনি কখনোই প্রিয় থাকতে পারেন না। যিনি যেমন আছেন, সেভাবেই তাকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে থাকতে সাহায্য করুন।

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে করোনার আগে আমেরিকাতে মাত্র এক বছরেই প্রায় ৪২ লাখ মানুষ প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন চেহারা সুন্দর করতে এবং স্তনের আকৃতি বৃদ্ধি করতে। এরসঙ্গে ছেলেদের জন্য রয়েছে সিক্সপ্যাক ফিগার, মেয়েদের বিজ্ঞাপনের মডেলের মতো স্কিন, কালার ও ফিগার।  

কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন, বিজ্ঞাপনে যে ছবিগুলো আমরা দেখি, তা প্রথমে কয়েকঘণ্টায় মডেলকে মেকআপ করা হয়। অনেক লাইটের ব্যবহার হয় ছবি তোলার সময়। ছবি তোলেন দেশের নামকরা ফটোগ্রাফাররা, এরপর হয় আসল কাজ। মানে শত শত ছবির ভেতর থেকে বেছে নেওয়া হয় মাত্র কয়েকটি, এগুলোকে এডিট করা হয় যত্ন নিয়ে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে। এবার বলেন কতটুকু আসল সৌন্দর্য আমরা দেখি, আর সেই মরিচিকার জন্য নিজেদের নিয়ে থাকি হতাশায়? 


ইঞ্জিনিয়ার পাবর্তী আহমেদ(হিজড়া, তৃতীয় লিঙ্গ)। তিনি দুঃখ করে বাংলানিউকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি এমন বডি শেমিং। আমার সঙ্গে যখন কোনো বন্ধু হেঁটে যেত সে হয়তো হিজড়া নয়, কিন্তু তাকেও মানুষ গালি দিত হিজড়া বলে। হিজড়া মানব সমাজের বৈচিত্র্য অথচ তাকে ছোট করে আত্মসম্মানবোধে আঘাত দিয়ে বিকৃত আনন্দ নেওয়ার চেষ্টা দেখি। এটা কষ্ট দেয়, অপমানিত বোধ করি।  

সব শেষে বলতে হয়, নিজেকে বা প্রিয়জকে নিয়ে হতাশা নয়। জিরো ফিগারের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সুস্থতা। নিজেকে ভালো রাখা-সুস্থ রাখার জন্য যা প্রয়োজন সব করতে হবে। কিন্তু অন্যের কথায় কান দেওয়ার কিছু নেই, নিজেকে ভালো বাসুন। পৃথিবীর সবাই সুন্দর-মানুষের আসল সৌন্দর্য তার মনে। আর সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে তার আচরণে-কাজে।  

যারা বুঝে বা বোঝানোর পরও বডি শেমিং করে, মন থেকে এখনই তাদের গুরুত্ব কমিয়ে দিন। যিনি আপনার কষ্ট বোঝেন না, ছোট করে মজা নেন, তাকে তো পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। কিছু মানুষকে এড়িয়ে চললে যদি জীবনটা সহজ হয়, তবে তাই হোক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২১ 
এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।