ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

বাংলা’র ঘামে গড়া স্বপ্নিল মালয়েশিয়া

মাজেদুল নয়ন ও সাজেদা সুইটি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪
বাংলা’র ঘামে গড়া স্বপ্নিল মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া থেকে: ‘বাংলা’ বলে কিছুটা নেতিবাচকভাবেই বাংলাদেশিদের সম্বোধন করা হয় মালয়েশিয়াতে। কিন্তু দুই যুগ ধরে নিজেদের অক্লান্ত শ্রম ও মেধায় এদেশকে সেই ‘বাংলা’রাই গড়েছেন।


 
স্বপ্নের মতো দেশটির এই চাকচিক্যময় রূপের পেছনে সবচে বেশি অবদান রেখেছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরাই।

জীবন-জীবিকার তাগিদে এদেশে এসেছেন তারা। কিন্তু মালয়েশিয়া তাদের যতটা দিয়েছে, তার চেয়ে কম দেননি তারাও এই দেশটিকে। নিজ হাতে গড়েছেন এদেশের যত স্থাপনা, অবদান রেখেছেন কৃষিতে।
 
এখানে বাংলাদেশিদের মেধার পাশাপাশি রয়েছে শ্রমের অবদান।
 
অনেক বছর ধরে এদেশে থাকা কয়েকজন জানান, পুত্রজায়া, সাইবারজায়া,তামিলজায়া, পাহাং, শাহ আলম, মালাক্কা, চেরাস, পুচং, কাজাং, জোহরবাড়ু, পেনাং-এই স্থানগুলোর মনোমুগ্ধকর রূপের পেছনে রয়েছেন বাংলার ‘শিল্পীরা’ই।
 
এদেশে বাংলাদেশি শ্রমিক ক্রমেই বেড়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে আরও সাড়ে ১৪ লাখ নিবন্ধিত শ্রমিক আসতে পারবে বলে ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
 
জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ আশার কথা জানিয়েছিলেন।
 
তবে এদেশে আসা শ্রমিকদের দক্ষতা ও বৈধতার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন এখানে অবস্থানরত শুভাকাঙ্ক্ষী প্রবাসীরা।
 
তাদের মতে, কাজের সুযোগ এখানে বিস্তর। মালয়েশিয়া জুড়ে চলমান ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি ) কাজে বাংলাদেশি শ্রমিকই বেশি।   অনেক জায়গা রয়েছে এখনো অনাবাদী। সেখানে কৃষিতে লাগতে পারে হাজার শ্রমিক।
 
তাই নিজেদের ভালোর জন্যই দক্ষতা ও বৈধতা নিয়ে আসা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন পুত্রজায়ায় নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করা মিনার হোসেন।
 
২০ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকা মিনার বলেন, মালয়েশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর আর দৃষ্টিনন্দন শহর পুত্রজায়া। এই শহরের প্রতিটি ইট-সুড়কি বাংলাদেশের শ্রমিকদের হাতে গাঁথা।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড় কেটে রাস্তা গড়েছি, বাড়িঘর হয়েছে। সবাই যখন এই জায়গাকে সুন্দর বলে, তখন নিজের ভেতরে অন্যরকম লাগে। কারণ আমাদের ঘাম এখানেই ঝরেছে, এখানেই শুকিয়েছে।
 
মিনারেরও আজ ভালো অবস্থা। কয়েকবছর ধরে হোটেল ব্যবসায় জড়িয়েছেন।
 
তিনি জানান, বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে অনেক সময় পেরে ওঠেন না অন্যদেশের শ্রমিকরা। বিশেষ করে তামিলরা। তারাই কিছুটা ঈর্ষা ও জায়গা দখলের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশিদের জন্য সমস্যা তৈরি করেন।
 
এছাড়া কিছুক্ষেত্রে বাংলাদেশিদেরও ভুল রয়েছে। নিজেদের ঐক্যের অভাবেই অন্যরা আজ ‘বাংলা’ বলে তাচ্ছিল্য করার সুযোগ পায়  বলে মনে করেন তিনি।
 
অথচ এদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশিদের অবদান। এসব প্রশস্ত রাস্তা, উঁচু দালান-কোঠা- সর্বত্রই রয়েছে বাংলাদেশিদের হাতের ছোঁয়া।
 
কুয়ালালামপুর থেকে চেরাস, কাজাংতামিলজায়ার দিকে যাওয়ার রাস্তা সরু ছিল একসময়। সেগুলো আজ প্রশস্ত, অবদান বাংলাদেশিদের। পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর কাজটি তারাই করছেন।
 
চেরাসের এক সময়কার নির্মাণশ্রমিক মুন্সিগঞ্জের শাহ আলম। এখানে রয়েছেন গত ২৪ বছর ধরে।

তিনি বলেন, তখন কদর পেতাম। ‘বাংলা’ বলে গাল শুনতে হতো না।
 
তিনি বলেন, এই চেরাসের রাস্তার কাজ করেছি। নিজ বাড়ির আঙিনার কাজ যেমন যত্নে করে মানুষ, সেই যত্নেই কাজ করেছি। এখান থেকে রুটি-রুজি বলেই শুধু না, এখানকার মানুষের আদর-ভালোবাসাও কাজের উৎসাহ দিত।
 
শাহ আলম এখন ব্যবসায়ী। ঠিকাদারি ও হোটেল ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটে তার। দেশ থেকে আসা মানুষদের সহযোগিতা করেন তিনি।
 
আলম বলেন আমি চাই, যারা আসছে,তারা যেন ভালো কাজ করার সুযোগ পায়।
 
তিনি জানান, বাংলাদেশিরাই কখনো কখনো বাংলাদেশিদের জন্য সমস্যা তৈরি করে।   সেই সুযোগটি নেয় তামিলসহ অন্যরা। বাংলাদেশিরা একে অন্যের পাশে না দাঁড়ানোর কারণে সমস্যায় পড়েন বেশি।
 
শাহ আলম বলেন, বাংলাদেশিদের ওপর বিভিন্ন সময়ে অন্যরা নানা রকম অত্যাচার করে। অনেক সময় প্রতিবাদের মানুষ জোটে না বলে কোনো ঘটনার তেমন সমাধানও হয় না।
 
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে এই প্রবাসীরা জানান, ৯৬ থেকে ৯৮ সাল সময়টিতে বাংলাদেশিরা বেশ নিরীহ ছিল। তাদের ওপর পূর্ব ভারত থেকে আসা মালয়ী তামিলরা অত্যাচার করতো, সুযোগ পেলেই ছিনতাই করতো।
 
এসব তামিল বাংলাদেশিদের কাছে এটা-সেটা চাইতো, না দিলে গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করতো না। শুধু তাই নয়, তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে মেরে পাসপোর্ট কেড়ে নিত।
 
ধীরে ধীরে বাংলাদেশিরাও তাদের টেক্কা দিয়ে চলার জ্ঞান অর্জন করে।
 Nayan_Sweety
তবে অভিজ্ঞরা জোর দিয়েই বলছেন, যারা দক্ষ ও বৈধ হয়ে এদেশে আসছেন তাদের অবস্থাই একসময় ভালো হয়েছে। কারণ তাদের ভয় কম থাকে, আয়ও বাড়ে নির্বিঘ্নে। কাজ করতে পারে বলে কাজ ভালো হয়। সফলতাও আসে দ্রুত।
 
এভাবে নিজের ও দেশের সম্মান বিবেচনায় রেখে চললে ‘বাংলা’ নামটিই একসময় প্রশংসা ও গর্বের হয়ে উঠবে বলে এসব সফল প্রবাসী মনে করছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ