বুকিত বিনতাং, মালয়েশিয়া থেকে: ভিন দেশি খাবারের সঙ্গে খুব দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ার খাবারের সঙ্গে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পেরেছেন বাংলাদেশীরা।
এর প্রধান কারণ হচ্ছে দেশি খাবারের স্বাদ নিয়ে মালয়েশিয়ায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ। এর মধ্যে একটি ‘রসনা বিলাস’।
২০১৩ সালে কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাংয়ে এই রেস্তোরাঁটির যাত্রা শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই রেস্তোরাঁটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশি খাবারের সুবাসেই রেস্তোরাঁটিকে খুঁজে নেন প্রবাসীরা।
কুয়ালালামপুরের আমপাংয়ে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করেন কুমিল্লার শরিফুল ইসলাম। প্রায় এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি এসেছেন রসনা বিলাস রেস্তোরাঁয়।
তিনি বলেন, রসনা বিলাসে এসে পুইশাঁক ও চিংড়ি মাছ না খেলে ভালো লাগে না। এছাড়া মালয় ও চাইনিজ খাবার খেতেও নানা ধরনের সমস্যা হয়, তাই এখানে আসা। রসনা বিলাসে আসলে মনে হয় বাংলাদেশের কোনো হোটেলের খাবার খাচ্ছি। অনেক সময় মায়ের হাতের রান্নারও স্বাদ পেয়ে থাকি এখানে। ’
রসনা বিলাস হোটেলে রয়েছে সব ধরনের বাংলাদেশি খাবার। যেমন সাদা ভাত, চিকেন বিরানি, কাচ্চি বিরানি, তেহেরি, পোলাউ ও সবজি পোলাউ।
তরকারীর মধ্যে রয়েছে, গরু, খাসী, ছাগল, মুরগি, চিকেন রোস্ট, চিকেন স্পাইস রোস্ট, ডাক কারি ও চিকেন কোরমা।
এছাড়া সবজির মধ্যে রয়েছে পুইশাঁক, লাউ চিংড়ি, পটল, আলু, কচুর লতি, ঢ্যাড়স, করলা, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, চিচিঙা, ঝিঙা, উস্তে, কচুর মূখি, ডাটা শাক, লাল শাকসহ সব ধরণের সবজি রান্না এই হোটেলে পাওয়া যায়। এছাড়া পরটা, চিজ পরটা, পটেটো পরটা, চা-পাতি, পটেটো পুরি, সিঙ্গাড়া, ডালপুরি, মুগলাই ও নানসহ নানা পদের খাবার।
রসনা বিলাসে হরেক পদের জুসও রয়েছে। ম্যাঙ্গ জুস, ওয়াটার মেলন জুস, অরেঞ্জ জুস, আপেল জুস, লেমন জুস, ব্যানান জুস, ক্যারট জুস, ক্যারট উইথ মিল্ক জুসসহ নানা পদের জুস সবার মন কাড়ে।
নানা স্বাদের মাছের রান্না হয় রসনা বিলাসে। এর মধ্যে অন্যতম রোহু ফিস, কার্প ফিস, কাস্কি, পাবদা, ইলিশ, চিংড়া, বাইলা, মোজাম্বিক তেলাপিয়া ও কইসহ নানা পদের খাবার।
রকমারী খাবারের মধ্যে আরোও রয়েছে চিকেন টিকা, গরুর টিকা, গ্রিল চিকেন উইং, তন্দুরি স্পেশাল চিকেন, ম্যাগি গোরিং চিকেন, ম্যাগি সুপ চিকেন, ম্যাগি গোর্নিং সি ফুড, ম্যাগি গোর্নিং বিফ, মি সুপ, সি ফুড, তমাই সুপ চিকেন, নাসি গোর্নিং, মি গোর্নিং চিকেনসহ হরেক পদের মূখরোচক খাবার।
দেশি খাবারের সুগন্ধে এই রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশিরা ছুটে আসলেও সব জাতি ছুঁটে আসেন বিডি টি’র জন্য। বিডি টি (বাংলাদেশি চা) সবার কাছে জনপ্রিয় বিশেষ করে চাইনিজ, ভারত, ইন্দোনেশিয়ান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তানি নেপালিদের কাছে। সবার কাছে বিডি টি’র জনপ্রিয়তার যেন কোনো জুড়ি নেই। মাত্র দুই রিঙ্গিত খরচা করেই যে কেউ বিডি টির স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন মালয়েশিয়ায়।
এছাড়া হট টি, আইস টি, টি তারা হট, টি ও জিঞ্জার, টি ও লেমন, আইস লেমন টি, গ্রিন টি, ব্লাক টি, কফি, মিলো হট, মিলো আইসন সবার কাছে জনপ্রিয়।
সব সময় এখানে বাঙালিদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। এছাড়া জালান সিলান কোতারায়ার বাংলা মার্কেটে রয়েছে রাজধানী রেস্তোরাঁ, রাধুনি রেস্তোরাঁ, খাবর খাবো রেস্তোরাঁ, ঘরোয়া রেস্তোরাঁ, ঢাকা বিরানী হাউজ, রেস্টুরেন্ট চেরিস, জিলানি রেস্তোরাঁ, বিসমিল্লাহ রেস্তোরাঁ, ফাতেমা রেস্তোরাঁ প্রমুখ।
কুয়ালামপুরে এমন কোনো মার্কেট নেই যেখানে বাংলাদেশি নেই। কোতারায়া বাংলা মার্কেটে শনি ও রোববারে বাংলাদেশিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। এছাড়া বিশেষ দিবসে চলে বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গানের ক্যাসেট।
‘রসনা বিলাস’ রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পেয়ার আহমেদ আকাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘রসনা বিলাসে’ বাংলাদেশিরা যাতে ঘরের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন সেইভাবে আমরা তৈরি করেছি। আমরা বাবুর্চিদের প্রথমেই বলেছি আমাদের মায়েরা যেভাবে খাবার রান্না করেছেন সেই ভাবে খাবার রান্না করতে হবে। মায়ের খাবারের স্বাদ বাংলাদেশিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় আমাদের লক্ষ্য। ’
তিনি আরো বলেন, আমাদের খাবার সম্বন্ধে এখন বিদেশিদেরও ভুল ধারণা দূর হয়েছে। সব দেশের মানুষ বিডি টি পছন্দ করে। এছাড়া চাইনিজ ও মালয় বাংলাদেশি খাবার পছন্দ করেন। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য কোনো বাংলাদেশি যেন এখানে এসে বুঝতে না পারেন আমি বিদেশের খাবার খাচ্ছি। দেশি খাবারের স্বাদ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ায় আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
এছাড়া মালয়েশিয়াতে অনেক বাংলাদেশি আছেন যারা এইসব রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে এসে একে অপরের খোঁজ খবর নিতে পারেন। এতে বিদেশের মাটিতেও আমাদের ভ্রাতৃত্ব আরো সুদৃঢ় হয়। ’
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৪
** নতুন আঙ্গিকে ইউনাইটেড, বাড়ছে যাত্রী সেবাও
** চকলেট কী? বাংলাদেশিদের কাছে অজানা!
** যেন সোনায় মোড়ানো নববধূ
** নান্দনিক সৌন্দর্যের পুত্রা লেক!
** মেঘের সঙ্গে গলাগলি করে ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য উপভোগ
** কবুতরের সঙ্গে প্রেম বিনিময়!