পারদানা স্কয়ার (পুত্রজায়া) থেকে: ‘বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো এবং এই সম্পর্ক আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মালয়েশিয়া কাজ করছে। দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে কোনো ধরনের অস্বস্তি নেই, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মালয়েশিয়া সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই জানালেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজাক।
বুধবার পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন আবদুর রাজাকের সঙ্গে তার কার্যালয় পারদানা স্কয়ারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকটি ছিলো অত্যন্ত হৃদ্যতা ও আন্তরিকতাপূর্ণ।
দুই নেতা উভয় দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একমত হন।
পরে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি চুক্তি, একটি প্রটোকল ও দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ভিসার প্রয়োজনীয়তার আংশিক বিলুপ্তি বিষয়ক এই চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনীতিক ও সরকারি সফরে আর ভিসা নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রিওট আনাক জায়েম।
প্রটোকলে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং মালয়েশিয়ার পক্ষে স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রিওট আনাক জায়েম।
পর্যটন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও মালয়েশিয়ার পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মুস্তাপা মোহামেদ।
সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও ঐতিহ্য বিষয়ক সহযোগিতার সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মুস্তাপা মোহামেদ।
পরে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ও চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ ও পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব একেএম শামীম আহমেদ।
আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে দুই প্রধানমন্ত্রীর। শুরুতেই মালয়েশিয়ার পরপর দুটি বিমান দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কাছে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফরের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের যে ভিত তৈরি হয়, আজও তা অক্ষুণ্ন ও অব্যাহত রয়েছে বলেও এ-সময় দুই নেতা একমত হন। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে আরও কাজ করে যাওয়ার কথা বলেন উভয় নেতাই।
পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক জানান, বৈঠকে বাণিজ্য ও অর্থনীতি, শ্রমশক্তি রপ্তানি ও বাংলাদেশে বিনিয়োগ, প্রধান এই তিনটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। বাণিজ্য-সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে সমঝোতা আলোচনা শুরু করতে দুই নেতাই সম্মত হয়েছেন।
তবে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য অসমতার কথা উল্লেখ করে এটি আরও কমিয়ে আনার কথা বলেন। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ রপ্তানি করে ১৩৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। আর বাংলাদেশে মালয়েশিয়া রফতানি করে ২.১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ।
মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীও এসময় অসম বাণিজ্যের বিষয়টি একবাক্যে স্বীকার করে নেন এবং এই বিপুল অসমতা কমিয়ে আনার পক্ষে মত দেন। এছাড়া শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যের পরিধি আরও ব্যাপক করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা হয়।
শহীদুল হক আরও জানান, এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৫ সালের পর দুই দেশের জয়েন্ট কমিশনের বৈঠক থেমে থাকার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়, ২০১৫ সালে এই বৈঠক পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের লক্ষ্যে ২০১২ সালে দুই দেশের মধ্যে হওয়া শ্রমশক্তি রপ্তানি চুক্তি সংশোধন করে যে প্রটোকল স্বাক্ষর হয়েছে, সেটিও এই আলোচনায় স্থান পায়। ১২ হাজার শ্রমিক নেওয়ার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হবে, ধীরে ধীরে ওই প্রদেশে মোট ৬০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলেও মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী একমত হন।
মালয়েশিয়ায় মোট ২ লাখ ৯৯ হাজার বৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজাক। এছাড়া অবৈধ শ্রমিকদের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তবে বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় জানান নাজিব তুন রাজাক।
আলোচনায় উঠে আসে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসঙ্গও। আসিয়ানের আগামী নির্বাচনে সভাপতির পদ চাইছে মালয়েশিয়া। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নতুন সরকার গঠনের পর মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত তিনি। এ বিষয়ে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীও ইতিবাচক মনোভাব দেখান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৪
** মালয়েশিয়ার সঙ্গে চার চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক
** পারদানা স্কয়ারে শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা
** পারদানা স্কয়ারে শেখ হাসিনা
**বাংলাদেশ হবে সবার বিনিয়োগের গন্তব্য
** বুধবার চুক্তি সমঝোতা-স্মারক-যৌথ ইশতেহার
**‘ভূতের পিছ পা বিএনপি জামায়াতের !’
** মাহাথিরকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ
** লাল-সবুজ পতাকায় সেজেছে কুয়ালালামপুর
** বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন বানাবে মালয়েশিয়া
** মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
** মালয়েশিয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী
** পুত্রজায়ায় হাসিনা-রাজাক বৈঠক বুধবার
** ভাড়াবিহীন বাসে ওয়াইফাই ও এসি!